বিশ্ব ইজতেমা-২০২৪-এর আম বয়ান

قال الله تعالى: وماهذه الحياة الدنيا الا لهو ولعب الاية

وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان الدنيا خلقت لكم وانتم خلقتم للاخره 

وقال صلى الله عليه وسلم ايضا: الكيس من دان نفسه وعمل لما بعد الموت 

আল্লাহ তাআলা সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে  মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। যেমন ولقد كرمنا بني ادم.. الايه 

অতঃপর মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এটা অল্প সময়ের জন্য। আর আখেরাতের জীবন চিরকালের। আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য বলে দিয়েছেন وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون তবে দুনিয়াতে ভয়ের বিষয় হলো-দুনিয়ার যে সময় চলে যায়, সে সময় আর ফিরে আসে না। 

আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য চন্দ্র-সূর্য, বাসস্থান; সবকিছুর ব্যবস্থা করেছেন। প্রাণীকুলকে যে সমস্ত খাদ্য দিয়েছেন, তার মধ্যে মানুষকে শ্রেষ্ঠ খাদ্য দিয়েছেন। যেমন, আমাদের বাড়িতে মেহমান আসলে আমরা চেষ্টা করি আমাদের সবসময়ের খাবারের চেয়ে উন্নত মানের খাবার দেয়ার। আর বিত্তবান হলে তো কথাই নাই। নানান রকমের আইটেম। ঠিক তেমনি আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য সর্বোত্তম খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা’আলা বলেনكلوا  من طيبات ما رزقناكم 

আমাদের সর্ব প্রথম কাজ- আল্লাহ তাআলাকে চেনা। যেহেতু মানুষ তাড়াহুড়া পরায়ন, এজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রথমেই নবী পাঠিয়েছেন। সর্বপ্রথম মানুষ সর্বপ্রথম নবী। 

প্রত্যেক মানুষের মাঝে তিনটা যোগ্যতা আছে। ১. ভালো-মন্দ বুঝা । এ যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে সে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে চিনতে পারে। 

কিন্তু মানুষের অবস্থা বিভিন্ন। এজন্য কেউ এক ধাক্কায় বুঝে। আর কেউ দুই ধাক্কায় বা কেউ আরও বেশি। কিছু মানুষ ভিন্ন, যারা গোড়ামী করে মূর্খতার কারণে। এরকম মানুষ নবীজির যুগেও ছিল। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কত চমৎকার চমৎকার দৃষ্টান্ত দিয়েছেনوالعاديات ضبحافالموريات قدحا فالمغيرات سبحا فاثرن به نقعا فوسطن به جمعا ان الانسان لربه لكنود 

একটা ঘোড়া তার মনিবের প্রতি কতটা অনুগত, যুদ্ধের ময়দানে কোনো ইট পাথর ঝর ঝাপড়ার ভয় করে না, শত্রুর মোকাবেলায় অগ্রসর হয়। পক্ষান্তরে মানুষ তার রবের প্রতি কতটা অকৃতজ্ঞ। 

আল্লাহ তাআলা আমাদের আজাদ ছেড়ে দেন নাই, বরং জীবন পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য কিতাব দিয়েছেন। মানুষ হলো কলকারখানা বা ফ্রিজ ইত্যাদি মেশিনের ন্যায়। মেশিনের কাগজপত্রে বিভিন্ন নিয়ম লেখা থাকে। এ অনুযায়ী এগুলো ব্যবহার করলে সে এবং তার পরবর্তী প্রজন্ম এগুলো ব্যবহার করতে পারবে ।

ঠিক তেমনি মানুষ হল মেশিন। যদি তার প্রত্যেকটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কোরআনে বলে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী কাজে লাগায়, তাহলে সেও নাজাত পাবে এবং তার দ্বারা অন্য মানুষেরাও সফলতার রাস্তা খুঁজে পাবে। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন تركت فيكم امرين ان تمسكتم بهما لم تضلوا ابدا كتاب الله وسنه رسوله 

মানুষ যখন সম্পদের প্রতি ঝুকে, তখন ইলম থেকে দূরে সরে যায়। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈদের পরবর্তীতে একটা সময় মানুষ সম্পদের প্রতি ঝুকে যায়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা চান নাই সমস্ত মানুষ ধ্বংস হয়ে যাক । তাই তিনি তার দ্বীনকে আবারো জিন্দা করেছেন। আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা পরিপূর্ণ দ্বীন দিয়েছেন। সে দ্বীনের নাম ইসলাম। এছাড়া সমস্ত ধর্ম ভ্রান্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন.. ومن يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه 

কিছু বিষয়ে আমাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন। যেমন- খাওয়া দাওয়া, ঘুমানো, পেশাব করা, পায়খানা করা। এগুলোর নিয়ম ও ইসলামে বলা আছে। যদি সে নিয়ম অনুযায়ী আমরা আদায় করতে পারি, তাহলে আল্লাহ তায়ালা বড় প্রতিদান দেবেন। কিছু বিষয়ে আবশ্য পালনীয়। যেমন- নামাজ, যার সমর্থ্য আছে হজ্ব যাকাত। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চললে আল্লাহ আমাদের এমন প্রতিদান দেবেন যে, আমাদের কানও বিশ্বাস করতে চাইবে না । আমাদের চোখ বিশ্বাস করবে না।

দ্বীনের ক্ষেত্রে দুইটা জিনিস। এক- নিজে আমল করা। দুই- অন্যের পিছনে মেহনত করা। 

আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বড়। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। যেমন তিনি রাসূলুল্লাহর জবানে বলেন قل هو الله احد الله الصمد لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا احد 

রাজা বাদশা, বড় বড় ফেরেশতা; সমস্ত মাখলুক আল্লাহর মুখাপেক্ষী। এমনকি হাওয়া বাতাস পানি আগুন আল্লাহর মুখাপেক্ষী। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ পর্যন্ত পৌছার বড় মাধ্যম হল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তার সময়টা ছিল বড় নাজুক। তাইতো আল্লাহ তায়ালা বলেন يا ايها النبي وحسبك الله ومن اتبعك من المؤمنين 

ইবাদতের মধ্যে বড় হল নামাজ। এই নামাজের দিকে মানুষকে আহবান এর মাধ্যমে হল আজান। عبد الله ابن زيد عبد ربهকে এক ফেরেশতা স্বপ্নে এসে আযানের শব্দগুলো শিক্ষা দেন। 

নামাজ আল্লাহ তার নবীকে নিজের কাছে ডেকে হাদিয়া হিসেবে দিয়েছেন। ৫০ ওয়াক্ত নামাজ। পরবর্তীতে মুসা আলাইহিস সালামের কাছে আসার পরে ৯বারে ৪৫ ওয়াক্ত কমান। মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লজ্জা বোধ করলেন। তিনি বললেন: আমি ঊর্ধ্ব জগতে এসেছি, এখানে বিভিন্ন নিদর্শন দেখেছি, জান্নাত জাহান্নাম আজাব শাস্তি নেয়ামত। এখন যদি আমার উম্মতের কাছে গিয়ে এগুলোর বর্ণনা দেই, তারপর তারা জিজ্ঞাসা করে যে, আমাদের জন্য কি নিয়ে এসেছেন? তখন আমি কি জবাব দেব! এই পাঁচ ওয়াক্ত যে ব্যক্তি নিয়মিত জামাতের সাথে আদায় করবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব দিবেন। 

ইউসুফ সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলতেন: ঈমান শিখ, নামাজ পড়ো , তাহলেই জীবনের মাকসাদ হাসিল হয়ে যাবে। 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: তোমরা জামাতের সাথে নামাজ পড়ো, মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা কালিমার তালকিন দেবে। আর যে জামাতে যায় না, সে গোমরাহ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। 

জামাতের ফজিলত হাদিসের কিতাবে ভরপুর । আমাদের ফাজায়েল শুনতে হবে এবং মাসায়েল জানতে হবে। ফাজায়েল আমরা কিতাব থেকে তালিমের মাধ্যমে জানব এবং মাসায়েল উলামায়ে কেরাম থেকে জিজ্ঞাসা করে করে জানব।

ফাজাইল দ্বারা আগ্রহ জন্মাবে, আর মাসাইল দ্বারা সঠিক তরিকা জানা হবে। 

কেয়ামতের দিন পাঁচটা জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার আগে কেউ এক কদমও সামনে অগ্রসর হতে পারবেনা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন   لا تزال قدما عبد حتى يسال عن خمس عن عمره فيما افناه وعن شبابه فيما  ابلاه  وعن مال اين اكتسب وفيما انفق ماذا عمل فيما علم او كما قال عليه الصلاه والسلام অর্থাৎ পাঁচটা জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার আগেই কোন ব্যক্তি তার কদম সামনে অগ্রসর করতে পারবে না সম্পর্কে কোথায় তা ব্যয় করেছ যৌবন সম্পর্কে কোথায় সেটা খরচ করেছো সম্পদ সম্পর্কে কোথায় থেকে অর্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছো এবং যা শিখেছো সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছো।

 আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামকে অনুসরণ করে উভয় জগতের সফলতা অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

শ্রুতিলিখন:

মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ

শিক্ষার্থী, জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ