ব্যবসায় আত্মনিয়োগ এবং ‘আমীন’ উপাধি লাভ

দাউদ ইবন হাসীন’ থেকে বর্ণিত যে, লোকেরা বলেছে, রাসূলুল্লাহ (সা) এরূপ শান-শওকতের সাথে যুবক অবস্থায় পৌঁছলেন যে, তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সাহসী, সর্বাপেক্ষা সচ্চরিত্র, সঙ্গী-সাথীদের সর্বাধিক খোঁজ-খবরকারী, সর্বাপেক্ষা সহনশীল, সর্বাধিক সত্যবাদী ও আমানতদার এবং ঝগড়া-বিবাদ, কটু কথা, অশ্লীলতা ও বাজে কথা থেকে সর্বাধিক দূরে অবস্থানকারী ছিলেন। তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে ‘আমীন’ উপাধিতে ভূষিত করে।

আব্দুল্লাহ ইবন আবুল হামসা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন নবুওয়ত প্রাপ্তির পূর্বে নবী করীম (সা)-এর সাথে কোন ব্যাপারে আমার কিছু দেনা ছিল। আমি তাকে বললাম, অপেক্ষা করুন, আমি এখনই আসছি। কিন্তু ঘটনাক্রমে ঘরে এসে বিষয়টি আমি বেমালুম ভুলে যাই। তিনদিন পর হঠাৎ বিষয়টি আমার স্মরণ হলে আমি দ্রুত ঐ জায়গায় গিয়ে দেখতে পাই, তিনি সেখানেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। তিনি কেবল আমাকে এটুকু বললেন যে, তুমি আমাকে খুবই কষ্ট দিয়েছ; তিনদিন যাবত আমি এখানেই অপেক্ষা করছি। 

নবী (সা) কর্তৃক বকরি চরান 

যেভাবে তিনি হযরত হালীমা সাদিয়ার গৃহে শৈশবকালে তাঁর দুধ ভ্রাতাদের সাথে বকরি চরাতেন, অনুরূপভাবে যুবক বয়সেও বকরি চড়িয়েছেন। হযরত জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা) বলেন, যাহরান নামক স্থানে আমি নবী করীম (সা)-এর সাথে ছিলাম। আমি সেখানে পিলু ফল ছিঁড়ছিলাম। তিনি বললেন, কালো কালো দেখে ছিড়ো, এগুলো সুস্বাদু হয়ে থাকে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি বকরি চড়াতেন (যে কারণে আপনি এটা জেনেছেন?) তিনি বললেন “হ্যা, এমন কোন নবী নেই যিনি ছাগল চড়াতেন না।

সিরিয়ায় দ্বিতীয় সফর এবং নাস্তুরা দরবেশের সাথে সাক্ষাত 

হযরত খাদীজা (রা) আরবের সম্ভ্রান্ত বংশীয়া ধনী মহিলা ছিলেন। তাঁর উচ্চ বংশ মর্যাদা এবং নম্রতা ও পবিত্রতার জন্য জাহিলী এবং ইসলামী উভয় যুগের জনগণই তাঁকে ‘তাহিরা’ নামে সম্বোধন করতো। কুরাইশের বাণিজ্য কাফেলা রওয়ানা হলে খাদীজাও তাদের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাণিজ্যে শরীক থাকতেন। এক খাদীজার পণ্য সামগ্রী সমগ্র কাফেলার পণ্য সম্ভারের সমান হতো। রাসূল (সা)-এর বয়স যখন পঁচিশ বছরে উপনীত হলো তখন ঘরে ঘরে তাঁর দায়িত্ববোধ ও আমানতদারীর সুনাম পৌঁছে গেল। এমনকি মক্কায় এমন কোন লোক ছিল না, যে তাকে ‘আমীন’ নামে সম্বোধন করতো না, খাদীজা তখন প্রস্তাব পাঠালেন যে, তিনি যদি তাঁর পণ্যসামগ্রী নিয়ে সিরিয়া গমন করেন, তবে অন্যদের মতই তাকে পারিশ্রমিক ও সম্মানী দেয়া হবে। তিনি স্বীয় পিতৃবা আবু তালিবের আর্থিক সংকটের প্রেক্ষিতে এ প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং হযরত খাদীজার দাস ‘মায়সারা’র সাথে সিরিয়ার দিকে রওয়ানা হলেন। বসরা পৌঁছে তিনি একটি ছায়াদার বৃক্ষের নিচে উপবেশন করেন। সেখানে ‘নাস্তুরা’ নামে এক দরবেশ বাস করতেন। দরবেশ তাঁকে দেখে কাছে এলেন এবং বললেন, ঈসা ইবন মরিয়ম (আ)-এর পর আপনি ছাড়া আর কোন নবীই এখানে অবতরণ করেন নি। এরপর মায়সারাকে বললেন, তাঁর দু’ চোখে ঐ রক্তিম আভা দেখতে পাচ্ছি। মায়সারা বলল, এ রক্তিম আভা তাঁর চোখ থেকে কখনো পৃথক হয় না। দরবেশ বললেন “তিনিই তিনি, ইনিই শেষ নবী।” এর পর বেচাকেনা শুরু হলে এক ব্যক্তি তাঁর সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হলো এবং তাঁকে বললো, আপনি লাত-উজ্জার কসম করে বলুন। নবী (সা) বললেন, আমি কখনো লাত-উযযার কসম খাইনি। আর ঘটনাক্রমে আমার সামনে লাত-উজ্জারপ্রসঙ্গ এসে গেলে আমি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করতাম অথবা কৌশলে পাশ কাটিয়ে সেখান থেকে চলে যেতাম। এ কথা শুনে লোকটি বলল, নিঃসন্দেহে এ তো আপনারই কথা অর্থাৎ সত্যবাদীর সত্য কথা। এরপর ঐ ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম, তিনিই ঐ যাঁর শান ও গুণের বিষয় আমাদের আলিমগণ আপন ধর্মীয় গ্রন্থে লিখিত পেয়েছেন।

মায়সারার বর্ণনা হলো, যখন দুপুর হয় এবং প্রচণ্ড গরম পড়ে, তখন আমি দু’জন ফেরেশতাকে দেখতাম তারা তাঁর মাথার উপর ছায়া বিস্তার করে রাখতেন। তিনি যখন সিরিয়া থেকে রওয়ানা দেন, তখন ছিল দ্বিপ্রহর আর দু’জন ফেরেশতা তাঁর

উপর ছায়া দিচ্ছিলেন। হযরত খাদীজাও স্বীয় বালাখানা থেকে তাঁর এ মর্যাদা প্রত্যক্ষ করলেন, তখন তিনি আশপাশের প্রত্যেক স্ত্রীলোককে এ দৃশ্য দেখালেন। সকল স্ত্রীলোকই এতে আশ্চর্য হয়ে যায়। এরপর মায়সারা এ সফরের সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করলো এবং বাণিজ্য লব্ধ সমস্ত সম্পদ খাদীজার নিকট সোপর্দ করলো। নবী (সা)-এর বরকতে এবারে খাদীজার বাণিজ্যে এত অধিক মুনাফা অর্জিত হয় ইতোপূর্বে কোনবারেই এ পরিমাণ মুনাফা অর্জিত হয় নি। হযরত খাদীজা তাঁকে যে পরিমাণ পারিশ্রমিক দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে দিয়ে দেন।

সূত্র: সীরাতুল মুস্তফা সা.

সংকলনে: আহমাদ আল গাজী