ভুয়া জন্ম ও মৃত্যু সনদ তৈরিতে জড়িত ৫ জন গ্রেফতার 

সম্প্রতি ভুয়া জন্ম ও মৃত্যু সনদ তৈরিতে জড়িত ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন মাহবুব আলী ও শাহ আলমকে রাজধানীর পল্লবী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ডিএনসিসির অঞ্চল-৪–এর স্প্রেম্যান হাসান তারেক ও ভ্যাকসিনেটর কোহিনুর সুলতানাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। 

এ ছাড়া জন্ম নিবন্ধনের জন্য ভুয়া কাগজপত্রসহ ফাইল জমা দিতে আসা মো. ফয়সাল নামে একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনিও এই চক্রের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে বেশ কিছু ভুয়া জন্ম সনদ, জন্ম ও মৃত্যু সনদ তৈরির ভুয়া কাগজপত্রসহ আটটি ফাইল, তিনটি হার্ডডিস্ক ও চারটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। 

সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, এই চক্রটি গত ছয় মাসে অন্তত তিন হাজার ভুয়া জন্ম ও মৃত্যু সনদ ইস্যু করেছে।

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার জেনারেল রাশেদুল ইসলাম সিআইডিতে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, অবৈধ উপায়ে কেউ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে সনদ তৈরি করছে। তাঁদেরকে চিহ্নিত করা ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে তিনি সিআইডিকে অনুরোধ জানান।

 এরপর সিআইডির প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়ার নির্দেশনায় সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) এই বিষয়ে অনুসন্ধান চালায়। কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে ‘জন্ম নিবন্ধন হেল্প ডেস্ক’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়েছে, মাত্র একদিনে দেশের যে কোনো জেলার জন্ম ও মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করুন। সাইবার পুলিশ সেন্টার ওই গ্রুপের অ্যাডমিনসহ চক্রটিকে শনাক্ত করে।

সিআইডি জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া ডিএনসিসির দুই কর্মচারী অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আইডি–পাসওয়ার্ড নিয়ে সার্ভারে ঢুকে ভুয়া তথ্য সংবলিত আবেদনপত্রে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ ইস্যু করতেন। পরে সেগুলো মাহবুব ও ফয়সালকে সরবরাহ করা হতো। গত ছয় মাসে তাঁরা সার্ভারে ঢুকে অন্তত তিন হাজার ভুয়া সনদ ইস্যু করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। 

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিআইডি জানায়, মাহবুব আলী ও শাহ আলম ফেসবুকে লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে গ্রাহক সংগ্রহ করতেন। ফয়সাল তাঁর দোকানে ফরম পূরণ করতে আসা লোকদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ভুয়া তথ্য সংযোজন করে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরির ফাইল বানিয়ে ডিএনসিসির ওই দুই কর্মচারীর কাছে জমা দিতেন। প্রতিটি ফাইলের বিপরীতে ৫৫০ থেকে এক হাজার টাকা করে নিতেন তাঁরা। যদিও জন্ম নিবন্ধনের সরকারি ফি ৫০ টাকা।

এই কাজে চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন জেলার আগ্রহীদের আবেদনের সঙ্গে ডিএনসিসি এলাকার একটি বিদ্যুৎ বিলের কাগজ যুক্ত করে দিতেন। অনেক ক্ষেত্রে মিরপুরের একটি স্কুলের ট্রান্সক্রিপ্ট এডিট করে সেখানে শুধু ছাত্র-ছাত্রীর নাম, পিতার নাম পরিবর্তন করে একই রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের কাগজ একাধিক আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করে দিতেন। কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই চক্রের সদস্যদের জন্ম সনদ দেওয়া হতো।

তথ্য ব্যবস্থাপনার সার্ভারে অবৈধভাবে ঢুকে ভুয়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রস্তুতকারী চক্রের পাঁচজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাঁদের মধ্যে দুজন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মী।