ভূমিকম্পের পর এবার বন্যায় বিপর্যস্ত তুরস্ক

গত মাসের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের পর থেকেই খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী তাঁবুতে বাস করছিল তুরস্কের সানলিউরফা ও আদিয়ামান প্রদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ। গতকাল রাতভর প্রবল বৃষ্টির পর ভোর থেকে আকস্মিক বন্যা ও জলোচ্ছাসে সেখানে কমপক্ষে ১৫ প্রাণহানি হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে।

সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নির্মিত তাঁবুগুলোর চারপাশে পানিতে সয়লাব হয়ে আছে। কোথাও কোথাও আশ্রয় শিবিরের ঘরগুলোতেও পানি ঢুকে গেছে।

একটি ভিডিওতে সড়কে পানির প্রবল তোড়ে ডজনখানেক গাড়ি ভেসে যেতে দেখা যায়। একটি বাড়ির অভ্যন্তরে ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তা থেকে আসা বানের পানিতে টয়লেটের কমোড উপচে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে তুর্কি দৈনিক জমহুরিয়াত জানিয়েছে, আদিয়ামান ও সানলিউরফায় বন্যায় বুধবার সকাল পর্যন্ত পাঁচজনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আকস্মিক বানে ভেসে যাওয়া বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ।

আদিয়ামান প্রদেশের গোলবাসি জেলায় ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার ও পুনর্গঠন কার্যক্রমের সমন্বয়ক নুমান হাতিপোগলু জানিয়েছেন, ভূমিকম্প দুর্গতদের অস্থায়ী আবাস হিসেবে ব্যবহৃত একটি কন্টেইনার পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে একজন নিহত ও চারজন নিখোঁজ হয়েছে। আমাদের টিম দ্রুত এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

সানলিউরফার গভর্নর সালিহ আয়হান জানিয়েছেন, সকাল পর্যন্ত সানলিউরফা প্রদেশে বন্যায় চারজনের প্রাণহানি হয়েছে। সিটি সেন্টারের অ্যাবাইড জংশনের কাছে জলমগ্ন রাস্তায় গাড়ি নিয়ে এগোতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ কমপক্ষে ৬ জন বানের তোড়ে ভেসে গেছে। তাদের সন্ধান পেতে চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন এলাকায় নিয়োজিত উদ্ধার টিম এখন পর্যন্ত ২০০ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

সানলিউরফা গভর্নরের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গতকাল রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণ আজও অব্যাহত থাকবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোতে কর্মরত গর্ভবতী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী কর্মীদের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রদেশের সব স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আদিয়ামান শহরের মেয়র সুলেইমান কিলিচ বলেছেন, গতকাল থেকে পুরো প্রদেশে কয়েক বছরের মধ্যে প্রবলতম বৃষ্টিপাত চলছে। দুইতলা, তিনতলা ভবনে বসবাসকারী বহু মানুষ নিজ বাসভবনের ন্যূনতম ক্ষতি না হওয়া সত্ত্বেও ভূমিকম্পের পর থেকে আতঙ্কের কারণে তাঁবুতে বসবাস করছিলেন। আমাদের একজন নাগরিক মারা গেছেন। শহরে আর কোনো প্রাণহানির খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

সানলিউরফার মেয়র জয়নাল আবিদিন বিয়াজগুল বন্যাকবলিত সড়কে নিজের ব্যস্ততার ছবি পোস্ট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, আমরা সব জনবল ও যানবাহন নিয়ে পথে আছি। নাগরিকদের মনোবল না হারাতে বলছি। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল না করে যার যার অবস্থানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।

স্থানীয় এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, সানলিউরফা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ভারি বর্ষণের কারণে শহরের কেন্দ্রস্থলসহ জিভেরেক, হিলভান, সুরুচ ও বিরানশেহের এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। অসংখ্য ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে।