ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে চাপ দিতে পারে না পুলিশ: ভিপি নুর

গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে চাপ প্রয়োগ করতে পারে না পুলিশ-প্রশাসন। গতকাল কাউন্সিলদের সঙ্গে মিটিং করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কর্মকর্তারা। সেখানে কিভাবে ভোটারদের কেন্দ্রে আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ভোটারদের ভোটকেন্দ্র আনা ডিএমপির কাজ নয়।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে পুরানা পল্টন মোড়ে পথসভা করে নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ। এসময় এসব কথা বলেন তিনি। পরে রাজধানীতে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করে দলটি।

নুর বলেন, আমাদের পরিষ্কার কথা আমরাও নির্বাচন চাই। ভোট দিতে চাই। তবে সেই নির্বাচন হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যেভাবে ‘৯১, ’৯৬, ’০১ ও ’০৮ সালে নির্বাচন হয়েছে। আমাদের যে আন্দোলন চলছে তা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়। দেশ বাঁচাতে এই আন্দোলনে সবাইকে শরিক হতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ভারতের মদদে একতরফা নির্বাচন করে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ভারত কখনও চায় না বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। কারণ, তাতে তাদের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে এবং চাপ বাড়বে। তাই আওয়ামী লীগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র বানিয়ে রাখতে চায় ভারত।

ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, আপনারা শুনেছেন মেহেরপুরে একজন বলেছেন, তিনি ভারতীয় প্রার্থী। তাই হারতে আসেননি। এতে স্পষ্ট, এই নির্বাচনে ভারতের কতটা প্রভাব রয়েছে। গণমাধ্যমে এসেছে- ওয়ারী জোনের ডিবির ডিসি এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছেন। তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে সাড়ে ৩ কোটি টাকার চেক লিখিয়ে নিয়েছেন। এভাবে বিরোধী নেতাকর্মী, ব্যবসায়ীদের মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে, রিমান্ডে নিয়ে টাকা আদায় করছেন কিছু অসৎ পুলিশ কর্মকর্তা। না পেলে অত্যাচার-নির্যাতন করছেন, নখ তুলে ফেলছেন , বিদ্যুৎ শক দিচ্ছেন। মানবাধিকারের যা চরম লঙ্ঘন।

নূর বলেন, ভিন্নমতের রাজনীতির কারণে অনেককে গ্রেপ্তার করে রেললাইন কাটা, নাশকতার মামলায় ফাঁসিয়েছে। জনগণ এগুলো বুঝে। পুলিশ, ডিবি, আর্মি- জনগণের প্রতিষ্ঠান। মানুষ কেন তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে? এনএসআই ,ডিজিএফআইসহ সবাইকে বলবো দেশ বাঁচাতে আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়ান।

দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) কালো আইন করে সভা সমাবেশ বন্ধ করতে পারেনি। জনগণের আন্দোলন বন্ধ করার এখতিয়ার কাউকে দেয়া হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী আমাদের ভোট বর্জনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলবে। ডিএমপির পক্ষ থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। যাতে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি বাড়ে। কিন্তু এটি কি ডিএমপির কাজ? আজকে পুলিশের, ইসির, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী- কার কি কাজ কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না।

তিনি বলেন, সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে একটাই দায়িত্ব নিয়েছে সরকারকে আবারও ক্ষমতায় আনা। আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার জন্য সব রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়কাজে ব্যবহার করছে। মেহেরপুরের সাবেক দুইবারের সংসদ সদস্য বলেছেন, আমি ভারতের পার্থী। এর মানে আমরা এতদিন যে বলে আসলাম, ভারত ও আওয়ামী লীগের যৌথ প্রযোজনায় নির্বাচন হচ্ছে, সেটি প্রমাণিত হলো। আবার সেই সাবেক সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বলছেন, তিনি শেখ হাসিনার প্রার্থী। আহারে নির্বাচন! নৌকা, স্বতন্ত্র নৌকা আর ডামি নৌকার লড়াই চলছে।

রাশেদ আরও বলেন, বিভিন্ন জায়গায় যে মারামারি হচ্ছে, সেটা কৃত্রিম প্রতিযোগিতার যুদ্ধ। এটা বহির্বিশ্বকে দেখানোর জন্য। এখানে আসলেই প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে-তা প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু কাজ হবে না। ভুয়া ও ডামি নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও ইসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। একতরফা নির্বাচন করলে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যে তা আসতে পারে। ফলে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ লাগবে এবং ভুক্তভোগী হবে দেশের জনগণ। তাই তাদের বলবো, রাজপথে নামুন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই এই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে হবে।

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শহিদুল ইসলাম ফাহিমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিল উজ্জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, মাহফুজুর রহমান, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান, গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।