মসজিদের ইমাম থাকেন গণরুমে তার রুমে ছাত্রলীগ কর্মী

হল দখল, চাঁদাবাজি, মাদক সরবরাহ থেকে শুরু করে নিয়োগ কিংবা দরপত্রে ভাগ বসানোসহ বিভিন্ন সময় নানান অভিযোগ ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। তবে ক্যাম্পাসে একক আধিপত্য বিস্তার করা ছাত্র সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এবার মসজিদের ইমামের কক্ষ দখল করে থাকার প্রমাণ মিলেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এএফ রহমান হলের ৪১৭ ও ৪১৮ নম্বর কক্ষের মাঝে কোনো সিরিয়াল নম্বর ছাড়াই হলের ইমামের জন্য বরাদ্দকৃত একটি কক্ষ রয়েছে। দীর্ঘদিন কক্ষটি দখল করে আছে চবি ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপ বাংলার মুখের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, এ কক্ষ ছাড়তে হলে তাদেরকে আরেকটি কক্ষ বুঝিয়ে দিতে হবে।

হল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন এএফ রহমান হলের মসজিদের ইমাম না থাকায় কক্ষটি ফাঁকা ছিল। এই সুযোগে কক্ষটি দখলে করে ছাত্রলীগ।

এদিকে চলতি বছরের জুলাই মাসে হলের মসজিদে ইমাম নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে গত ছয় মাসেও নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে জায়গা মেলেনি এই ইমামের। উল্টো কক্ষে উঠতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন তিনি। এ অবস্থায় মসজিদের ইমামকে বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে হলটির গণরুমে।

বর্তমানে ইমামের কক্ষ দখল করে থাকা ছাত্রলীগ কর্মী শাওন জামান বলেন, ‘বাংলার মুখের নেতা আবু বকর তোহা ভাই আমাকে এই সিট দিয়েছেন। আমি তার মাধ্যমে এখানে আছি। ইমাম সাহেব এখানে আসলে তাকে অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে। ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপ বাংলার মুখের নেতা আবু বকর তোহা বলেন, ‘দীর্ঘদিন এই কক্ষ পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। আমরা ব্যবহার উপযোগী করে শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করেছি। হল প্রশাসন যদি ইমামকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলে, তাহলে আমরা কক্ষ ছেড়ে দেব।’

এএফ রহমান হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘হলে ইমামের কক্ষ আছে কি-না আমার জানা নেই। আর ছাত্রলীগ সেটা দখল করে আছে এ সম্পর্কেও আমি অবগত নই। ইমামকে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তার সমস্যার বিষয়টা জেনে আমি ব্যবস্থা নেব।’

ভুক্তভোগী হলের পেশ ইমাম মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘ইমামের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষটি খালি না থাকার বিষয়টি হল প্রশাসনকে জানানোর পর আমাকে গণরুমে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আমার জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় গণরুমে থাকা আমার জন্য কষ্টকর।’

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি আবাসিক হলই ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। ছাত্রলীগে যোগ না দিলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হলে থাকার সুযোগও ক্ষীণ। ছাত্রলীগের ৮টি সক্রিয় উপ-গ্রুপের নেতাকর্মীরা দখল করে আছেন হলগুলো।ছাত্রদের ৭টি আবাসিক হলের মতো ছাত্রীদের চারটি হলের চিত্রও একই রকম।

তাছাড়া দীর্ঘদিন হলের আসন বণ্টন না হওয়ায় অনেক কক্ষ দখল করে আছে রাজনীতির ছত্রছায়ায় থাকা অনেক অছাত্র। যার ফলে হলে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।