মাদারীপুরের দুর্ঘটনার ৫ কারণ, ১৪ সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার ৫টি কারণ উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এতে ১৪টি সুপারিশ করা হয়েছে। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুনের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) পল্লব কুমার হাজরা। পরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।

রোববার খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহণের যাত্রীবাহী একটি বাস পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে খাদে পড়লে ১৯ জন নিহত হন। পরে মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মনিরুজ্জামান ফকির, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ হাসানাত-ই-রাব্বি, মাদারীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হোসেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির নিবন্ধন সাময়িক স্থগিত এবং ফিটনেস মেয়াদোত্তীর্ণ থাকায় তা এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলের অনুপযোগী ছিল। ইমাদ পরিবহণের বাসটি চলছিল বেপরোয়া গতিতে। চালকের পেশাদার লাইসেন্স থাকলেও ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না, তার পেশাদারি দক্ষতার ঘাটতি ছিল। এক্সপ্রেসওয়েতে একমুখী রাস্তায় দুই লেন অপ্রতুল। অতিরিক্ত লেন না থাকায় ভিন্ন গতির যানবাহন প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়, যা গাড়ি চালনায় বিঘ্ন ঘটনায়। এছাড়া বৃষ্টিবিঘ্নিত পরিবেশে ভোরের ঠান্ডা আবহাওয়ায় চালকের মুহূর্তের অসচেতনতায় পিচ্ছিল রাস্তায় বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এত বেশি প্রাণহানির কারণ হিসাবে এতে বলা হয়েছে, এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে গার্ড রেইল না থাকায় বাসটি বিনা বাধায় রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এর ফলে নিহতের সংখ্যা বেড়েছে।

দুর্ঘটনা রোধে ১৪টি সুপারিশ : এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা রোধে ১৪টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। সেগুলো হলো-চালক ও সংশ্লিষ্ট সবার লাইসেন্স এবং একটি গাড়ির সব বৈধ কাগজপত্র নিশ্চিত করে মহাসড়কে গাড়ি পরিচালনা, চলাচলকারী দ্রুতগতির গাড়ির যাত্রীদের সিটবেল্ট পরিধান, গাড়ির ইন্টেরিয়র নরম বস্তু দিয়ে তৈরি করা, এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে গার্ড রেইল স্থাপন, ভবিষ্যতে নির্মিতব্য এক্সপ্রেসওয়েতে একমুখী রাস্তায় কমপক্ষে তিন লেনের ব্যবস্থা রাখা, উভয় মুখে কমপক্ষে ছয় লেনের ব্যবস্থা করা, লম্বা সরলরৈখিক রাস্তায় হালকা রাম্বল স্ট্রিপের ব্যবস্থা রাখা, মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়ির সব হালনাগাদ তথ্য একটি সমন্বিত ডেটাবেজে রেখে তাতে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোর অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রম বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত জনবল ও টহল গাড়িসহ আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত করা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাসের নিজস্ব চেকপয়েন্টে যাত্রীর সংখ্যা চেক করার পাশাপাশি গাড়ির আগমনের সময় সংরক্ষণ ও তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা, দুর্ঘটনায় আঘাতের মাত্রা কম থাকলেও দ্রুত সেবা না পাওয়ায় মৃত্যু ও স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় এক্সপ্রেসওয়ের নির্দিষ্ট দূরত্বে ট্রমা সেন্টার বা হাসপাতালের ব্যবস্থা রাখা, যাত্রীদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট পরিবহণের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষণ করা, দুর্ঘটনা কমানো এবং দুর্ঘটনা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ সহজতর করতে প্রতিটি গাড়িতে এবং মহাসড়কে জিপিএস ট্র্যাকার রাখা, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও অনলাইনে তা মনিটরিং করার ব্যবস্থা রাখা, দিনের নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ করে রাতে, ভোরে কিংবা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় গাড়ির গতিসীমা অপেক্ষাকৃত কমিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা, এক্সপ্রেসওয়ের প্রতিটি গাড়ির গতিবেগ ডিজিটাল ডিসপ্লেতে প্রদর্শন করে চালকদের সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) পল্লব কুমার হাজরা বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সময় সড়কটি বৃষ্টির কারণে পিচ্ছিল ছিল। চালকের অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা ধারণা করছি। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে না বলে আশা করছি।