গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে আটকে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের উত্থাপিত প্রস্তাবটি। শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় প্রস্তাবটি তোলা হয়। খবর এএফপির।
ভোটাভুটির এ ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। অস্থায়ী সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের উত্থাপিত এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৫ সদস্যের পরিষদে, পক্ষে ভোট দেয় ১৩ দেশ। ভোটদানে বিরত ছিল যুক্তরাজ্য।
কিন্তু ‘ভেটো ক্ষমতাধর’ যুক্তরাষ্ট্র বিপক্ষে ভোট দেয়ায় ভেস্তে যায় প্রস্তাবটি। মুখে সংঘাত বন্ধের কথা বললেও, এ ঘটনার মাধ্যমে যুদ্ধ ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলো দেশটি।
প্রসঙ্গত, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের ভেটো (আমি মানি না) ক্ষমতা রয়েছে। এ দেশগুলোর কোনো একটি বিপক্ষে ভোট দিলে প্রস্তাব পাস করা যায় না।
৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই সংঘাত বন্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে দেখা গেছে ইসরায়েলের পরম মিত্র, যুক্তরাষ্ট্রকে। কিন্তু মুখে সংঘাত বন্ধের কথা বললেও তেল আবিবকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তার জেরে বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো সেসব তৎপরতা। তবে জাতিসংঘে, ওয়াশিংটনের এমন পদক্ষেপে তুমুল সমালোচনার ঝড় বিশ্বজুড়ে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি রবার্ট উড বলেন, ৭ অক্টোবর থেকেই শঙ্কটের গঠনমূলক সমাধানের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের সব সুপারিশ অবজ্ঞা করা হয়েছে। কোনোভাবেই আমরা এগুলো সমর্থন করতে পারি না। এছাড়া, সন্ত্রাসবাদ থেকে নিজেদের রক্ষার অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে। হামাস ৭ অক্টোবর যা ঘটিয়েছে তা কোনো রাষ্ট্র মেনে নিতে পারে না, মানা উচিতও না।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি। এর মধ্য দিয়ে লাখ লাখ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পরবে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি রিয়াদ মনসুর বলেন, সংকটময় পরিস্থিতিতে সুস্পষ্ট দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তা পরিষদে আবারও বাধা দেয়া হলো। লাখ লাখ মানুষের জীবন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলা হলো। গণহত্যার অবসানে স্পষ্ট অবস্থানের পরিবর্তে যুদ্ধাপরাধ সংগঠনের পথ প্রসারিত করা হলো। এই ফলাফল আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। এই নৃশংসতা বন্ধে যা কিছু করা সম্ভব চালিয়ে যাব। আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, একমাত্র যুদ্ধবিরতিই মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে।
গাজা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদকে অকার্যকর রাখার জন্য কড়া ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে রাশিয়াও। জাতিসংঘে রাশিয়া প্রতিনিধি দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি বলেন, দুইমাস ধরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তারক্ষা এবং ফিলিস্তিনে রক্তপাত বন্ধ করতে পারেনি। এর একমাত্র কারণ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থান্বেষী-ধ্বংসাত্মক অবস্থান। তারা মিত্রকে রক্ষা করতে যা কিছু করা সম্ভব সবই করছে।