যুদ্ধবিধ্বস্ত খান ইউনিসে ফিরে আসতে শুরু করেছে গাজাবাসী

গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস থেকে ৭ এপ্রিল, রোববার ইসরায়েলি সৈন্যদের প্রত্যাহার করা হয়। এরপর এই অঞ্চলে ছেড়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা শহরটিতে আসতে শুরু করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত খান ইউনিসে ফিরে আসার পর চার সন্তানের মা মাহা থায়ের বলেছেন, এখানে মৃত্যুর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

৩৮ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি এই নারী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘আমাদের আর কোনো শহর নেই, চারদিকে কেবলই ধ্বংসস্তূপ। একেবারে কিছুই বাকি নেই। আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় নিজের কান্না থামাতে পারিনি।’ 

তিনি আরও বলেছেন, ‘সমস্ত রাস্তাঘাট বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আমি লোকেদের ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ বের করতে দেখেছি। সবখানে মৃত্যুর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’ থায়ের জানিয়েছেন, তার বাড়ি আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।   

এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী খান ইউনিস থেকে  সৈন্য প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে। তারপরেই ইসরায়েলি হামলার ভয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা একে একে ফিরে আসতে শুরু করে। খান ইউনিসের বাসিন্দাদের কেউ কেউ তাদের বাড়ির অবশিষ্টাংশ খুঁজে পায়।   

গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে খান ইউনিস এবং এর আশেপাশের এলাকায় প্রায় ৪ লাখ মানুষ বাস করত। তবে গত কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলি বিমান এবং কামান থেকে বোমাবর্ষণের পর বেশিরভাগ এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।   

সাইকেল এবং অদ্ভুত পিকআপ ট্রাকে চড়ে ফিলিস্তিনিরা গাজা উপত্যকার দক্ষিণে রাফা থেকে খান ইউনিসের দিকে আসছিল। ইসরায়েলি স্থল অভিযান এবং অবিরাম বোমাবর্ষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য গাজার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা রাফাতে আশ্রয় নিয়েছিল। রাফায় বর্তমানে ১৫ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে। 

থায়ের বলেছেন, ‘আমি আমার ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাপার্টমেন্টেই ফিরে যাব, যদিও এটি বসবাসের জন্য উপযুক্ত নয়, তবে তা তাঁবুর চেয়ে ভাল।’ তিনি জানিয়েছেন, তার প্রতিবেশীরা আরও দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছে। তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তারা কোথায় যাবে তা তারা জানে না। 

এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এএফপিকে জানিয়েছে, রোববার স্থল সেনাদের ৯৮তম ডিভিশনকে খান ইউনিস থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। একজন কর্মকর্তা ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজকে বলেছেন, ‘খান ইউনিসে হাজার হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে আমাদের থাকার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা সেখানে যা যা করা সম্ভব সবই করেছি।’  

উল্লেখ্য, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু করে। ৬ মাস ধরে চলমান এই যুদ্ধে ৩৩ হাজার ১৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু ছিল। 

সূত্র: এএফপি