অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, রাতারাতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। এটি নিয়ে কাজ চলছে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আল্টিমেটলি এ সংকট তো কাটাতে হবে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে মন্ত্রীর নিজ দপ্তরে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশনস) অ্যানা বেজার্ডের সঙ্গে গত রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) প্রায় সৌয়া এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশ যে সমস্যাগুলো ফেস করছে, এগুলো নতুন কোনো সমস্যা নয়। বাংলাদেশ এ সমস্যাগুলো যেভাবে মোকাবিলা করছে সেটার প্রশংসা করেছে তারা। কাজেই এর মধ্যে সন্দেহের কিছু নেই।
তিনি বলেন, যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে চায় না, তাদের সঙ্গে তারা মিট করতে চায়, তাদের সঙ্গে তারা কথা বলতে চায়। আমি বলেছি, বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন- আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে পদ্মাসেতু তৈরি করেছে, জোড়াতালি দিয়ে করেছে, যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। জনগণের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা উঠবেন না, কারণ এটি ভেঙে পড়তে পারে। একজন নেত্রী যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এত বড় দল, প্রধান বিরোধী দল হিসেবে তিনি দাবি করেন, তার মুখ থেকে এ ধরনের কথা আমরা আশা করিনি। বিশেষ করে এটা তিনি বোঝেননি, এ ব্রিজ কীভাবে তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যত মেগাপ্রজেক্ট করেছে, সবই শেখ হাসিনার সরকারের। ২০১৭ সালে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঠাকুরগাঁও গিয়েছিলাম। তার দুদিন আগে বিএনপি মহাসচিব তিনি একটা কমেন্ট করেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনো উন্নয়ন হয়েছে কি না,তিনি তো কিছু দেখেন না। আমি তখন সেখানে জনগণের উদ্দেশে বলেছিলাম, সেখানে লাখ লাখ লোক ছিল। আমি তখন বলেছিলাম, আপনাদের ছেলের (ছাওল) কিন্তু চোখ খারাপ হয়ে গেছে। আপনারা তাড়াতাড়ি ঢাকায় নিয়ে চোখের ডাক্তারকে দেখান। আর খুব দামি চশমা কিনে দেন যাতে সব পরিষ্কার দেখতে পান। উন্নয়ন হচ্ছে, আপনার যদি চশমাটা ঠিক থাকে তাহলে তো দেখতে পাবেন। আর চশমা যদি ঠিক না থাকে, তাহলে তো আমার কিছু করার নেই। ভালো ডাক্তার দিয়ে আপনার চোখটা পরীক্ষা করান এবং চশমা নিন। তাহলে সবই চোখে পরিষ্কার দেখতে পাবেন।
তিনি আরও বলেন, কিছু দিন আগে মেট্রোরেল উদ্বোধন হলো। ওই অঞ্চলের (উত্তরা, মিরপুর) যারা থাকেন মানুষের যে কি উচ্ছাস, আনন্দ, উল্লাস! বিশেষ করে নারীরা মেট্রোরেলে উঠে স্ট্যান্ড ধরে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তাদের চোখে মুখে প্রশান্তি এবং আনন্দ, এটি পরিষ্কার। কাজেই মেগাপ্রজেক্ট সম্পর্কে অনেক কথা বলেছে তারা বিরোধী দল বা বিএনপি। কিন্তু মানুষ কত উপকৃত হয়েছে এবং কত খুশি হয়েছে, তা আমি বললাম। মেগা প্রজেক্ট করব কি করব না। করলে কী হবে, শুধু ক্রিটিসিজম করলে তো কোনো লাভ হবে না। এগুলো শেখ হাসিনা বানিয়েছেন ঠিকই কথা। কিন্তু বানিয়েছেন তো একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, চিন্তা নিয়ে। বর্তমান এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, জনগণ তা গ্রহণ করেছে। জনগণ উৎসাহ দিয়েছে, এতো চমৎকার একটা প্রজেক্ট বাংলাদেশে এটা করা সম্ভব! এয়ারপোর্ট থেকে যে এক্সপ্রেসওয়ে, তারা উৎসাহ দিয়েছে। চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেলের কথাও আমরা তাদের বলেছি।
এ সময় বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশনস) অ্যানা বেজার্ড বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি সরকারের উদ্যোগে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস জানান।
এর আগে রোববার সকাল ৯টা ৪০ মিনিট থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রায় সৌয়া এক ঘণ্টা দিকে আগারগাঁওয়ের ইআরডি ভবনে মন্ত্রীর দপ্তরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এই বৈঠকে, অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারসহ সংস্থাটির ঢাকা অফিসের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রথম অফিসিয়াল সফরে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশনস) আনা বিজার্ড।
শনিবার সন্ধ্যায় একদিনের এই সফরে আসেন বিশ্বব্যাংকের এমডি। এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বিজার্ড। তার সঙ্গে রয়েছেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার।