রাশিয়ার বিরুদ্ধে জেলেনস্কির গল্প ফাঁদার চেষ্টা বিফল

পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় নিতে নারাজ ইউক্রেন

গত দু’দিন ধরে লাগাতারভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা পোল্যান্ডে ক্ষেপনাস্ত্র হামলার কারণ সম্পর্কে কথা বলার বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও তার কর্মকর্তাদের সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। মঙ্গলবার পোল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মিসাইল বিস্ফোরণের পর জেলেনস্কি এক বক্তৃতায় দাবি করেন যে, পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছুড়েছে রাশিয়া, যার ফলে দুইজন নিহত হয়। পরের দিন, ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন যে, ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্ভবত ইউক্রেনীয়। জেলেনস্কির কার্যালয়ের পশ্চিমা কর্মকর্তাদের একজন জানিয়েছেন যে, ধারাবাহিক জরুরি ফোনলাপের মাধ্যমে মার্কিন কর্মকর্তারা ন্যাটো মিত্রদের পোল্যান্ডে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা জোটকে আরো উস্কে দিতে জেলেনস্কির মিথ্যা গল্প ফাঁদার চেষ্টা এবং ইউক্রেনের মিত্রদের এসব পদক্ষেপ ওয়াশিংটন ও পশ্চিমা জোটের সাথে কিয়েভের মতভেদের প্রথম প্রধান পার্থক্যগুলির একটিকে প্রতিফলিত করেছে, যারা প্রায় নয় মাস ধরে ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সিংহভাগ সাহায্য দিয়ে আসছে।

যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের সাথে কিয়েভের অভ্যন্তরীণ পার্থক্যগুলিকে ঢাকার চেষ্টা করছেন, তবে শীতকালে যুদ্ধ চলতে থাকার অর্থ হ’ল, ইউক্রেন বিষয়ে মার্কিণ ও পশ্চিমা জোটের এই ধরনের আরো বিভেদ দেখা দিতে পারে। ইউরোপ বিশেষজ্ঞ প্রাক্তন কর্মকর্তা হিদার কনলি বলেছেন, ‘আমি মনে করি আমরা সবাই একটি খুব মূল্যবান সবক শিখেছি যে, চোখের পলকে আপনার কিছু বলা সমিচীন নয়, যতক্ষণ না আপনি বুঝতে পারবেন যে বিষয়টি কী কারণ এখন ঝুঁকি অনেক বেশি’। ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার আক্রমণ সামরিক জোটের প্রতিক্রিয়া উস্কে দিতে পারে এবং ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে বিশ্বব্যাপী সতর্কতাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার বিস্ফোরণের ঘটনার পর জেলেনস্কি এবং তার কিছু সহযোগী দ্রুত ক্রেমলিনকে দোষারোপ শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো এবং পোলিশ নেতারা বলেন যে, প্রমাণ অনুসারে পোল্যান্ডে হামলাটি সম্ভবত ইউক্রেনের একটি বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র থেকে ঘটেছে, যা রাশিয়ার একটি হামলাকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছিল।

বুধবার জেলেনস্কি বলেন, তার সামরিক নেতারা তাকে নিশ্চিত করেছেন যে, ক্ষেপণাস্ত্রটির উৎস ছিল রাশিয়া। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কোন সন্দেহ নেই যে এটি আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র ছিল না বা আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল না।’ তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে এশিয়া সফর থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ফিরে আসার পর জেলেনস্কির মন্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, ‘এটি কোনো প্রমাণ নয়।’ এ বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কোনো মন্তব্য না কররেও যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে বলেছে যে, তারা বিশ্বাস করে যে ক্ষেপণাস্ত্রটি খুব সম্ভবত ইউক্রেন থেকে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র মন্তব্য করেছেন যে, প্রশাসন এমন কিছু দেখেনি যা পোল্যান্ডের এই মূল্যায়নের বিরোধিতা করে যে বিস্ফোরণটি সম্ভবত ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের ফলাফল।

বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলেনস্কি এবং তার কর্মকর্তারা পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করতে নারাজ ছিলেন এবং তাদের কিছু ইউরোপীয় মিত্রের কাছে বলেছেন যে, ক্ষেপণাস্ত্রটি যে ইউক্রেনীয় ছিল, তারা তার নিশ্চিত প্রমাণ দেখতে চান। কিন্তু বৃহস্পতিবারের মধ্যে জেলেনস্কি তার অবস্থান কিছুটা সরে আসেন। সিঙ্গাপুরের ব্লুমবার্গ নিউ ইকোনমি ফোরামকে তিনি বলেন, ‘আমি ১শ’ শতাংশ জানি না, আমার মনে হয় বিশ্বও ১শ’ শতাংশ জানে না কী হয়েছিল’। জেলেনস্কির নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে সাংবাদিকরা বৃহস্পতিবার মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সরাসরি উত্তর দেননি। তবে তিনি বলেছেন যে, তিনি এবং প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা ইউক্রেনের সাথে যোগাযোগ করছেন এবং সবাই পোল্যান্ডের তদন্ত শেষ করার জন্য অপেক্ষা করছে।

মার্কিন জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ মার্ক মিলি বুধবার রাশিয়ার সাথে শান্তি আলোচনার জন্য ইউক্রেনের বর্তমান যুদ্ধক্ষেত্রের সুবিধা ব্যবহার করার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, জেলেনস্কির বিস্তৃত লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও কিয়েভ শেষ পর্যন্ত রাশিয়াকে সম্পূর্ণরূপে তার অঞ্চল থেকে সরাতে সক্ষম হবে না এবং শক্তির মুহূর্তে আলোচনা করাই উত্তম। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র মস্কো এবং সুলিভানে তার দূতাবাসসহ কার্যত সমস্ত স্তরে রাশিয়ান কর্মকর্তাদের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ বজায় রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া আলোচনা রাশিয়ায় আটক আমেরিকানদের এবং ক্রেমলিনের পারমাণবিক হুমকিসহ একাধিক বিষয় স্পর্শ করেছে। এই কূটনৈতিক সংযোগগুলো সময়ের সাথে স্পর্শকাতর প্রমাণিত হতে পারে, যদি ইউক্রেন এবং রাশিয়া আলোচনার টেবিলে বসে। সূত্র : পলিটিকো।