রাষ্ট্রদূতের মধ্যস্থতায় ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে দুই বাংলাদেশি পরিবার

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পটোয়ারী, বিপিএম (বার) এর মধ্যস্থতায় সৌদি আরবে নিহত দুই বাংলাদেশির পরিবার প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে।

রাষ্ট্রদূতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং মধ্যস্থতায় ২০০৬ সালে দাম্মামে নিহত সাগর পাটোয়ারীর পরিবারকে ৫১ লক্ষ সৌদি রিয়াল পাঠানো হয়।

এছাড়া, ২০১৯ সালে রিয়াদে নিহত আবিরণের পরিবারকে ৪৮ লক্ষ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণ বাবদ বিতরণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

২০০৬ সালের ২৭ জুন সৌদি আরবের পূর্ব প্রদেশের রাজধানী দাম্মামে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন সাগর পাটোয়ারী। তিনি কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার বাসিন্দা। দীর্ঘসময় আততায়ীকে সনাক্ত করতে না পারায় যথাসময়ে মামলাটির অগ্রগতি হয়নি।

পরে ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট শ্রমকল্যাণ উইং প্রতিনিধি দাম্মাম দক্ষিণ থানায় পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে তিনি জানতে পারেন, সেখানে একটি চুরির মামলায় আটক আছেন সৌদি নাগরিক উমর আল শাম্মেরি। যিনি সাগর পাটোয়ারি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন তালিকায় ছিলেন।

থানা হতে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উমরকে বিবাদী করে মামলা করলে এই বিষয়ে পুনঃতদন্ত করা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিহত সাগরের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়।

পরবর্তীতে, সোশ্যাল মিডিয়া ও অজ্ঞাত বিভিন্ন লোকের সহযোগিতায় এবং রাষ্ট্রদূতের দিকনির্দেশনায় বিজ্ঞ আদালতে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন শ্রমকল্যাণ উইংয়ের প্রতিনিধি।

২০২১ সালের ২৪ মার্চ বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট আদালত অভিযুক্ত উমর আল শাম্মেরির বিরুদ্ধে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন।  

তবে, অভিযুক্তের পিতা অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের দাবী প্রত্যাহারের আপোস প্রস্তাব জানায়। ফলে রাষ্ট্রদূতের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালের আপোস প্রস্তাবে সম্মত হন নিহত সাগর পাটোয়ারীর ওয়ারিশগন। 

পরে আদালত, অভিযুক্তের পরিবারের নিকট থেকে রক্তপণের চেক (নং-১৯৭৩৪৫৯৭) গ্রহণ করে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন।

পরবর্তীতে, ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর দাম্মামস্থ সৌদি ফ্রান্সি ব্যাংকের ফয়সলিয়া শাখা মারফত দূতাবাসের ব্যাংক হিসাবে ৫১ লাখ রিয়াল জমা হয়। 

অন্যদিকে ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ নিহত হন গৃহকর্মী মোসা. আবিরণ বেগম। তিনি খুলনার পাইকগাছার বাসিন্দা। রিয়াদের আজিজিয়াস্থ নিয়োগকর্তার বাসভবনে, গৃহকর্ত্রী আয়েশা আহমাদ সগির আল জিজানি এ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত হন।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানী, গৃহকর্তা বাসেম সালেম সগির ও তাদের পুত্র ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে গ্রেফতার করে আজিজিয়া পুলিশ।

দীর্ঘ বিচারকার্য শেষে গত ১৪ ডিসেম্বর আদালতের ৩ সদস্য বিশিষ্ট বিচারক বেঞ্চ প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রী আয়েশা বিরুদ্ধে কেসাসের (জীবনের বিনিময়ে জীবন) রায় দেন।

এছাড়াও অন্যান্য আসামিদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল অর্থদণ্ড প্রদান করে মামলার রায় ঘোষণা করেন।

উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হলে সেটাও খারিজ হয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল থাকে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিবার ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে রক্তপণের বিনিময়ে আসামিকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। সম্মতি জানিয়ে নিহতের পরিবার সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আসামিদেরকে ক্ষমার সম্মতি প্রদান করে রাষ্ট্রদূত বরাবর আবেদন করেন।

প্রসঙ্গত, সৌদি আরবে সর্বনিম্ন রক্তপণ ৩ লক্ষ সৌদি রিয়াল। তবে এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রদূত জাবেদ পটোয়ারীর প্রচেষ্টায় ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল রক্তপণ পরিশোধের বিনিময়ে ক্ষমা করতে সম্মত হয় নিহতের পরিবার।

তবে, বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রক্তপণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয় অভিযুক্তের পরিবার। ফলে রিয়াদের ডেপুটি গভর্নর নাবিল বিন আব্দুল্লাহ আল-তাওয়ীলের হস্তক্ষেপ কামনা করে তারা।

পরে, চলতি বছরের ১৫ মে প্রধান আসামির হত্যার রায় বাতিল করে বিজ্ঞ বিচারক। পক্ষান্তরে, আপোস অনুযায়ী নিহত মোসা. আবিরণ বেগমের বৈধ ওয়ারিশগণের নামে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু করা হয়। পরবর্তীতে সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর তা দূতাবাসের একাউন্টে জমা হয়।

এদিকে, বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর সাগর পাটোয়ারী ও আবিরণ হত্যা মামলায় সৌদি আরবে কোনো বাংলাদেশির অনুকূলে সর্বোচ্চ ব্লাডমানি আদায় হওয়ায় খুশি নিহতের পরিবার। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মরত সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে তারা।

এছাড়াও এ মধ্যস্থতার ফলে একজন সৌদি নাগরিকের প্রাণ বেঁচে যাওয়ায় সৌদি সরকার ও নিহতের পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করেছে।