রেস্টুরেন্টের ওয়েটার থেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাজ্যের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক। জন্ম ১৯৮০ সালে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের বন্দরনগরী সাউদাম্পটনে। বড় হয়েছেন এই শহরেই। কিন্তু ঋষি সুনাকের জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও তাঁর বাবা-মা ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। কথিত আছে, ঋষি সুনাকের পরিবার তিন প্রজন্ম ধরে ভারতের বাইরে বসবাস করে আসছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঋষির দাদা-দাদি দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক আগেই বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে আফ্রিকায় পাড়ি জমান। উদ্দেশ্য ভালো কাজের সন্ধান এবং বিদেশের মাটিতে উচ্চ শিক্ষা। ঋষির বাবা-মা উভয়ের জন্ম পূর্ব আফ্রিকায়। বাবা জশবীর সুনাক ও মা ঊষা সুনাক; যথাক্রমে কেনিয়া এবং টাঙ্গানিকায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও ঋষির পরিবার এক সময় থাকতেন পূর্ব আফ্রিকায়। সেখান থেকে ১৯৬০-এর দশকে তাঁর দাদা-দাদি তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে পূর্ব আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন এবং সাউদাম্পটনে বসতি স্থাপন করেছিলেন তাঁর পরিবার। ঋষি সুনাকের বাবা ছিলেন একজন চিকিৎসক (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে জেনারেল প্র্যাকটিশনার)। আর মা ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ঋষি সবার বড়। বাকি দুই ভাই-বোন হলেন- সঞ্জয় সুনাক ও রাখি সুনাক। বেসরকারি এক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে ঋষি সুনাক বলেছিলেন, সাউদাম্পটনে বাবা-মায়ের গল্প শেষ হয়নি, তবে আমার গল্পের শুরু এই শহরেই। পরিবারই আমার কাছে সব কিছু। পরিবারই আমাকে এমন সুযোগ দিয়েছে যা আমাকে স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করেছিল।

শিক্ষা  কর্মজীবন

মেধাবী ঋষি সুনাক পড়াশোনা করেছিলেন সাউদাম্পটনের একটি প্রাইভেট বোর্ডিং স্কুল ‘উইনচেস্টার কলেজে’। আর এই স্কুলের পড়াশোনার জন্য খরচ পড়ত ৪৩ হাজার ৩৩৫ পাউন্ড। ঋষি ছিলেন এই স্কুলের হেড বয়। এর আগে ঋষি সুনাক স্ট্রউড স্কুলে পড়াশোনা করেছেন (হ্যাম্পশায়ারের একটি প্রস্তুতিমূলক স্কুল)। আর গ্র্যাজুয়েশন করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অক্সফোর্ডের লিংকন কলেজে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি (পিপিই) বিষয়ে পড়াশোনা করেন। মেধাবী ঋষি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ঋষি সুনাক কৈশোরে একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করেছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্র বলছে, সাউদাম্পটনে অবস্থিত একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে কাজ করেছেন। স্থানীয় এক গণমাধ্যমকে এ নিয়ে ঋষি সুনাক বলেছিলেন, এটি আনন্দের কাজ ছিল না। ওই সময় কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। তবে কাজটি পাওয়া আশ্চর্যজনক বিষয় ছিল। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে এমবিএ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ঋষি একটি রক্ষণশীল প্রচারাভিযানের সদর দফতরে ইন্টার্নশিপ হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০১ সালে বিবিসি ডকুমেন্টারি মিডল ক্লাস : দিয়ার রাইজ অ্যান্ড স্প্রল-এ এক সাক্ষাৎকারে ঋষি সুনাক বলেছিলেন, ‘আমার বন্ধু আছে যারা অভিজাত, আমার বন্ধু আছে যারা উচ্চ শ্রেণির, আমার বন্ধু আছে যারা শ্রমিক শ্রেণির।’ ঋষি সুনাক স্নাতক শেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত আমেরিকান বিনিয়োগ কোম্পানি ব্যাংক অব গোল্ডম্যান শ্যাক্সের সঙ্গে কাজ করেন। পরে তিনি হেজ ফান্ড ম্যানেজমেন্টে চলে যান এবং অবশেষে ২০১০ সালে নিজস্ব ফার্ম থেলেম পার্টনার্স শুরু করেন। রাজনীতিতে আসার আগে ঋষি একটি বিলিয়ন পাউন্ডের গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। যা ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোয় বিনিয়োগে সহায়তা করত।

স্ত্রী  সন্তান

আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়াশোনার সময় নিজের জীবনসঙ্গী অক্ষতা মূর্তির দেখা পান। তারপর প্রেম এবং প্রণয়। এই দম্পতি ২০০৯ সালে বেঙ্গালুরুতে বিয়ে করেছিলেন। দাম্পত্য জীবনে এই দম্পতি দুটি কন্যা সন্তানের জনক-জননী। তাঁদের মেয়েদের নাম যথাক্রমে- অনুষ্কা এবং কৃষ্ণা। ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঋষি সুনাক বলেন, আমাদের কন্যারা আমাদের জীবনকে অত্যন্ত ব্যস্ত এবং বিনোদনে ভরিয়ে রেখেছে। স্ত্রী অক্ষতা ভারতীয় বিলিয়নিয়ার এবং ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণ মূর্তির কন্যা। তিনি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম ক্যাটামারান ইউকে-এর পরিচালক। দ্য সান পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঋষি সুনাক বলেছিলেন, আমার শ্বশুর তাঁর জীবনে যা অর্জন করেছেন তার দশমাংশ যদি আমি অর্জন করি, তাহলে আমি একজন সুখী মানুষ হব। তিনি যা অর্জন করেছেন তাতে আমি সত্যিই গর্বিত। ঋষি সুনাক স্ত্রী অক্ষতা সম্পর্কে বলেন, অক্ষতা একজন নগণ্য মানুষ এবং অবশ্যই আমি আমার স্ত্রীর পছন্দকে সমর্থন করি।  যদিও ঋষি অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর স্ত্রী ট্যাক্সের কারণে ‘নন ডমিসাইলড’ অর্থাৎ বিদেশে তাঁর উপার্জিত অর্থের জন্য তিনি ব্রিটেনে কোনো আয়কর দেন না। এতে তাঁকে অস্বস্তিতেও পড়তে হয়েছিল।