মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেখানকার সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার ও বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী হওয়া রোহিঙ্গাদের দুর্দশা প্রতি মাসেই বাড়ছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ।
সংস্থাটির এশিয়া প্রোগ্রামের জ্যেষ্ঠ যোগাযোগ ও পরামর্শক কর্মকর্তা মার্গারিট ক্ল্যারি স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও সংঘাতের ঝুঁকি এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তায় সাম্প্রতিক কাটছাঁটের প্রভাবের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটির মতে, এ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ এবং দাতা দেশগুলোর আরও টেকসই পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার ও বাংলাদেশ বিষয়ক সিনিয়র কনসালটেন্ট থমাস কিয়ানের বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে যাওয়ার ছয় বছরের বেশি সময় পরও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা প্রতি মাসে আরও বাড়ছে।
২০১৭ সালে বাংলাদেশে আসার পর থেকে এই বছরটি সবচেয়ে খারাপ যাচ্ছে। আধিপত্য নিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর লড়াইয়ের কারণে হত্যার ঘটনা বেড়েছে; অপরাধ অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কিছু পর্যবেক্ষণ গোষ্ঠী অপহরণের সংখ্যা চারগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে।
যদিও আগে সহিংসতা কেবল রাতেই ঘটত, জঙ্গিরা এখন ছুরি এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি বন্দুক নিয়ে দিনের বেলাতেই শরণার্থী শিবিরে ঘুরে বেড়ায়।
তদুপরি তহবিলের অভাবে জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা প্রতি মাসে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৮ ডলার করতে বাধ্য হয়েছে যা দিনে ২৭ সেন্টের কমে দাঁড়িয়েছে। অপুষ্টি আরও বাড়ছে। শুধু দৈনিক মুজুরির জন্য আরও তরুণ সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দিচ্ছে।
অন্যদিকে কিশোরী এবং নারীদের পারিবারিক উদ্যোগে বিয়ে দেওয়ার জন্য মালয়েশিয়ায় পাচার করা হচ্ছে। অনেক শরণার্থী ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব কম আশাবাদী। কারণ ২০১৭ সালে যারা তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিল, সেই সামরিক বাহিনীই যখন মিয়ানমার শাসন করছে, তখন নিরাপদ প্রত্যাবাসন অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।
শরণার্থী শিবির থেকে পালাতে বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে ইতোমধ্যেই আন্দামান সাগর পাড়ি দিতে ঝুঁকিপূর্ণ নৌকাভ্রমণের চেষ্টা করা শরণার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রসঙ্গত, প্রতিবেদনের সম্পূর্ণ লেখাটি বুধবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।