মুমিনের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে শয়তান। সে ঈমানদারদেরকে জান্নাত থেকে বিরত রাখতে চায়। মুমিন ব্যক্তি নিজের জান্নাতকে আবাদ রাখতে, জাহান্নাম ও আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচতে নিজে নিজেকে শয়তান থেকে দূরে রাখা চাই।
আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে এমন শক্তি দান করেছেন যে, মানুষের শরীরের যেখানে যেখানে রক্ত চলাচল করে, শয়তান সেখানে সেখানে চলাচল করতে পারে, থাকতে পারে। يجري من الإنسان مجرى الدم। শয়তান সবসময় মানুষের অন্তরে বসে থাকে। কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। আল্লাহর রহমত ও জান্নাত থেকে দূরে থাকার কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। এমন শক্তি আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে দিয়েছেন।
দুনিয়া হচ্ছে পরীক্ষার জায়গা। এখানে পরীক্ষা চলতে থাকে। মুমিনের আকীদা হচ্ছে- আল্লাহ তায়ালা জান্নাত জাহান্নাম তৈরি করেছেন। মানুষের দুনিয়ার জীবন শেষ হবে। হাশরের ময়দান কায়েম হবে। তখন পরীক্ষার ফলাফল দেখা হবে– মানুষ শয়তানের অনুসরণ করেছে? নাকি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করেছে। এটাই হচ্ছে পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় যদি কেউ সফল হতে চায়, অর্থাৎ শয়তানের অনুসরণ ছেড়ে আল্লাহর সত্য নবীর অনুসরণ করে সফল হতে চায়, তাহলে তার জন্য দুনিয়ার রাস্তা একটিই। তা হচ্ছে– আল্লাহর জিকির।
যেখানে আল্লাহর জিকির থাকে, সেখান থেকে শয়তান পলায়ন করে। যদি সে মুমিনের অন্তরে থাকে, আর মুমিনের অন্তর এক মুহূর্তের জন্য আল্লাহকে স্মরণ তথা জিকির করে, তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে শয়তান পলায়ন করে। অন্তরে গাফলতি থাকলে শয়তান জেঁকে বসে। এই কারণেই বলা হয়েছে اذكروا الله ذكرا كثيرا অর্থাৎ আল্লাহকে স্মরণ করো। আল্লাহর জিকির করো। বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকির করো। খুব ভালোভাবে আল্লাহর জিকির করো।
শয়তান প্রতি মুহূর্তে আমার আপনার পেছনে লেগে থাকে। তার থেকে বাঁচার জন্য সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করা চাই। তাহলেই সে ব্যর্থ হবে। অন্যথায় শয়তান আমাকে আপনাকে ধোঁকায় ফেলবে। তার এই ধোঁকার পরীক্ষা থেকে বাঁচতেই প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর স্মরণ তথা জিকির করা চাই।
এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ইসলামের বিধিবিধান তো অনেক। কুরআন তেলাওয়াত করা, নামাজ পড়া, সম্পদ হলে যাকাত দেওয়া, সামর্থ্য হলে হজ করা, উমরা করা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন– যা সমস্ত আমলকে একত্রিত করে। ইসলামের সকল বিধিবিধান মনে রাখা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন একটি আমল বলে দিন– যা সকল আমলকে মনে রাখা সহজ করে দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন لا يزال لسانك رطبا من ذكر الله। এই আমলটি করো। সকল আমল সহজ হয়ে যাবে। নিজের জবানকে সবসময় জিকিরে ব্যস্ত রাখো।
শয়তান সবসময় তোমাকে জান্নাতের পথ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে। আল্লাহকে স্মরণ রাখো, তুমি সফলকাম হবে। শয়তান ব্যর্থ হবে। কেননা যেখানে আল্লাহর স্মরণ থাকে, শয়তান সেখান থেকে পলায়ন করে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল কাজকে কঠিন বলে শয়তান তোমাকে আমল থেকে বিরত রাখে। যদি তুমি তাকে পরাজিত না করতে পারো, তাহলে সে তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করবে। আর যদি তুমি তাকে পরাজিত করতে পারো, তাহলে আল্লাহর রাস্তা তোমার জন্য। আর আল্লাহর রাস্তা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দেখিয়ে গিয়েছেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতে ঘরে প্রবেশ করে ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখো। ঘরে যে সমস্ত পাত্রে খাবার থাকে, সেগুলো ঢেকে রাখো। শয়তান থেকে বাঁচার জন্য। প্রশ্ন তৈরি হয়– শয়তান তো মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকতে পারে, ঘরের দরজা বন্ধ থাকলে কি সে উপর দিয়ে প্রবেশ করতে পারনে না? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বলেছেন– বাতি বন্ধ রাখো, দরজা বন্ধ রাখো, পাত্র ঢেকে রাখো। এই হাদিসের উদ্দেশ্য হচ্ছে– বিসমিল্লাহ বলে দরজা বন্ধ করো। বিসমিল্লাহ বলে পাত্রের ঢাকনা বন্ধ করো। যখন আল্লাহর নাম নিয়ে বন্ধ করা হবে, শয়তান ঢুকতে পারবে না। ঘরের মানুষের উপর শয়তান তার শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে না। পাত্রের খাবারের মধ্যে তার শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে না। কারণ হচ্ছে– তুমি ঘরের দরজা বিসমিল্লাহ বলে বন্ধ করেছো। পাত্রের ঢাকনা বিসমিল্লাহ বলে বন্ধ করেছো।
শয়তান আল্লাহর জিকির শুনতে পারে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন আজান হয়, মুয়াজ্জিন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলতে থাকে, শয়তান তখন পলায়ন করতে থাকে। এতদূর পলায়ন করে–যাতে আজানের আওয়াজ শুনতে না পায়। যেখানে আল্লাহর জিকির হয়, সেখানে শয়তান থাকবে; এমনটা হতেই পারে না।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, টয়লেট হচ্ছে নোংরা জায়গা। এখানে শয়তান থাকে। তাই টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলবে। কিছু হাদিসে এসেছে– টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে اللهم اني اعوذ بك من الخبث والخبائث বলবে। তখন শয়তান তোমাকে সেখানে অবস্থানকালীন কোনো কুমন্ত্রণা দিতে পারবে না। ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ হচ্ছে তুমি আল্লাহকে স্মরণ করেছো।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন মসজিদে যাবে, তখন এই দোয়া পড়বে:
اعوذ بالله العظيم وبوجهه الكريم وسلطانه القديم من الشيطان الرجيم
তখন শয়তান থমকে দাঁড়ায়, আরে! সে তো আমার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। আল্লাহর জিকির এমন এক জিনিস, যার দ্বারা শয়তান পরাজিত হয়ে যায়।
আমি পূর্বেই বলেছি– মুমিনের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে শয়তান। সবসময় মুমিনের পিছনে লেগে থাকে। সে মানুষকে ডান দিক থেকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে, না পারলে বাম দিক থেকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে, না পারলল সামনে থেকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে, না পারলে পেছন থেকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে। لأتينهم من ببن ايديهم ومن خلفهم وعن ايمانهم وعن شمائلهم ولا تجد أكثرهم شاكرين
মানুষ শয়তান থেকে বাঁচবে কিভাবে? ঐ ব্যক্তিই বাঁচতে পারবে, যে সবসময় আল্লাহর জিকির করবে। সকালে জিকির করলে সকালে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে পারবে। দুপুরে জিকির করলে দুপুরে বাঁচতে পারবে, রাতে জিকির করলে রাতে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে পারবে। কুরআন বলে اذكروا الله ذكرا كثيرا অর্থাৎ বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করো। সবসময় আল্লাহর জিকির করো। শয়তান থেকে বেঁচে থাকবে। এটাকেই কুরআনে বলা হয়েছে যে ان عبادي ليس لك عليهم سلطان অর্থাৎ এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আমার বান্দাদের উপর শয়তানের কোনো কর্তৃত্ব চলবে না। ঐ সমস্ত বান্দা; যাদের উপর শয়তানের কর্তৃত্ব চলবে না, তারা কারা? তারা হচ্ছে– আল্লাহর জিকিরকারী।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা আমার জিকির করে, তারা আমার বান্দা। আর যারা আমার জিকির করে না, তারা শয়তানের অনুসারী। ঐ সমস্ত ব্যক্তিরাই সৌভাগ্যবান, যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা নিজের বান্দা বলেছেন। তারা হচ্ছেন আল্লাহর জিকিরকারী। তাদের অবস্থা হচ্ছে– শয়তানের প্রভাব তাদের মধ্যে পরে না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সবসময় আল্লাহর জিকির করার তৌফিক দান করুক। শয়তানের ধোঁকা ও কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুক। আমিন।