শোলাকিয়া ঈদগাহে পাঁচ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহে পাঁচ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এবার ছিল সেখানে ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাত। জামাতে এবার স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মুসল্লি অংশ নেন। ২০০ বছরের ইতিহাসে করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে এ মাঠে বন্ধ ছিল ঈদ জামাত।

গত ২০২২ সাল থেকে আবার আগের ধারাবাহিকতায় মাঠে নামাজ শুরু হয়। এবার মানুষের আগ্রহ ছিল এই মাঠের দিকে বেশি। ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ধারণা দেন, এবার শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল ফিতরে জামাতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ অংশ নেয়।

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই ঈদ জামাতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করেন। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সকাল থেকেই মুসল্লিরা মাঠের দিকে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া মাঠের দিকে, যা পরিণত হয় জনসমুদ্রে।

এবারো মাঠে জায়নামাজ ছাড়া কোনোরকম ব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে আসা ছিল নিষিদ্ধ। অন্তত ১০টি নিরাপত্তা তল্লাশির ভেতর দিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হয়েছে মুসল্লিদের। মাঠ ও এর আশপাশে ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চার স্তরের নিরাপত্তা। সিসি ক্যামেরায় মনিটর করা হয় মাঠের ভেতর ও চারপাশ। মাঠের চারপাশে ছিল ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। চারটি শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরায় মনিটর করা হয় মাঠ ও এর আশপাশ এলাকা।

সকাল ৮টার দিকেই মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মূল মাঠ। জামাত শুরু আগেই মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তা, ফাঁকা জায়গা, বাড়ি, বাড়ির ছাদে মুসল্লিরা নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। ১০টা বাজতেই ঐতিহাসিক এই মাঠের ইমাম এলান দেন, শোলাকিয়ার ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাত শুরু হতে যাচ্ছে।

দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট, তিন মিনিট ও এক মিনিট আগে যথাক্রমে তিনটি, দু’টি ও একটি গুলির আওয়াজ করা হয় শটগানে। শুরু হয় ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত। জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা শোয়াইব বিন আবদুর রউফ।

জেলা প্রশাসক মো: আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো: জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজসহ বিশিষ্টজনেরা এ জামাতে শরিক হন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের জন্য দিক-নির্দেশনামূলক খুতবা দেন ইমাম। এরপর কাঙ্ক্ষিত মোনাজাত।

মাঠের লাখো মানুষ অংশ নেন মোনাজাতে। দেশের সমৃদ্ধি, পাপ থেকে মুক্তি এবং পরম করুাণাময়ের অপার সন্তুষ্টি অর্জনে দু’হাত তুলে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া মাঠে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সাথে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত।