সড়ক-রেল-নৌ-আকাশ সব পথেই ছুটছেন মানুষ

ঘরে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগমনী বার্তা। এক মাস রোজা রেখে আপনজনের সঙ্গে ঈদ উৎসব পালন করতে ইতোমধ্যে কর্মজীবী মানুষ গ্রামের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। সড়কপথ, রেলপথ, নৌপথ, আকাশপথ যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন গ্রামের দিকে। রাজধানী ঢাকা এতোমধ্যেই ফাকা হতে শুরু করেছে। তবে গত কয়েক বছরের মতো এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না। বাসের টিকেট বেশি নেয়া হলেও মানুষ স্বস্তিতে ঘরে ফিরছেন। মহাসড়কে যাবনাহনের চাপ থাকায় ধীরগতি দেখা গেলেও চিরচেনা ভয়াবহ যানজট এবার তেমন চোখে পড়েনি।

সরেজমিন ঘুরে কয়েকদিন খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, এবার ভিন্ন এক ঈদ যাত্রা করছে উত্তরবঙ্গের যাত্রী ও চালকরা। ঈদের কয়েকদিন আগ থেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যেখানে চরম ভোগান্তি নিয়ে মহাসড়কে চলাচল করতো হতো তাদের সেখানে ভিন্নচিত্র এবার ঈদ যাত্রার সড়কের নাম ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গগামী পরিবহনগুলো বিরতিহীনভাবে চলাচল করছে। ফলে কোন ভোগান্তি বা যানজট ছাড়াই অনায়াসে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হচ্ছে মানুষজন। একইভাবে উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী পরিবহনগুলোও স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করছে। সড়কের উন্নয়ন ও জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগে কারণে এবার ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ বাড়ি ফিরছে। রেলপথে প্রচণ্ড ছিড় এবং সিডিউল বিপর্যয় অন্যান্য ঈদের আগে দেখা গেলেও এবার তেমন নেই। এক ঘন্টা দেড় ঘন্টা বিলম্ব হলেও বিভিন্ন রুটের রেলগুলো চলছে। যাত্রীরাও জানান তারা এবার ঝামেলামুক্ত জার্নি করছেন। নৌপথ ও আকাশ পথেও একই অবস্থা। বলা যায় এবার কর্মজীবী মানুষ ঝামেলা মুক্ত এবয় স্বস্তি নিয়েই ঘরে ফিরছেন।

সড়ক পথ : গতকাল সোমবার ঈদ যাত্রার মহাসড়কগুলোতে গাড়ির চাপ থাকলেও কোনো যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। এতে স্বস্তিতে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ যাত্রা করছে ঘরমুখো মানুষ। অন্যান্য বছরের তুলনায় ট্রেন যাত্রাতেও ভোগান্তি কমেছে অনেকটাই। ৫ থেকে দশ মিনিট ব্যতিত এখন পর্যন্ত বিরাট সময়ের ট্রেন বিলম্বের খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, এবার লঞ্চে যাত্রীর চাপ বাড়লেও, এখন পর্যন্ত ভোগান্তির খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল সোমবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি।

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চিত্র এচবার একেবারেই পাল্টে গেছে। এই রুটের যাত্রীরা বেশ স্বস্তিতে ঘরে ফিরছেন। অন্যতম ভোগান্তির জায়গা চন্দ্রা মোড়ে গাড়ির চাপ ব্যাপকহারে বেড়েছে, কিন্তু একেবারেই যানজট নেই।

গতকাল সোমবার সকাল থেকে মহাসড়কের কোথাও কোন পরিবহনের ধীরগতি বা চাপ দেখা যায়নি। তবে গভীররাতে পরিবহনের চাপ ছিল। এলেঙ্গা হতে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারের দুই লেনের সড়কটুকু নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও সেটি যান চলাচলে এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি। ওই সড়কটুকু শুধুমাত্র ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পরিবহনগুলো উত্তরবঙ্গের দিকে চলাচল করছে। আর উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী পরিবহনগুলো এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতুর ১৩ কিলোমিটার সড়কে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ঢাকাগামী ওইসব পরিবহনগুলো ভুঞাপুর-এলেঙ্গা আঞ্চলিক বিকল্প সড়ক ব্যবহার করে ঢাকার দিকে চলাচল করছে। এতে যদিও পরিবহনগুলোতে বাড়তি ১৫ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে যেতে হচ্ছে।

দিনাজপুরগামী হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার জানান, যাওয়া এবং আসাতে কোথায় কোন যানজট পাইনি। এলেঙ্গা থেকে কিছু অংশ এবং সেতুর আগে কিছু অংশ বাড়তি লেন করায় মহাসড়কে যানজট হয়নি। তবে সেতুর টোলপ্লাজায় একটু ধীরগতি তৈরি হলেও তেমন সময় লাগেনি সেতু পার হতে।

পরিবহন চালকরা বলছেন, ঈদযাত্রায় চন্দ্রা মোড়ে যানজট নেই, এটা বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। তবে, অন্য সময়ের চেয়ে এবার গাড়ির চাপ বেশি বলে মনে হচ্ছে। প্রতিটি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের সরব উপস্থিতির কারণে এখানে পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক দেখেছি।

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব বলেন, চন্দ্রা কেন্দ্রিক মহাসড়কে তিন শিফটে ৫৯৭ জন পুলিশ ও থানা পুলিশসহ এক হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। চন্দ্রার কয়েক কিলোমিটার সড়কে বিশেষ কারণ ছাড়া কোনো যানবাহনকে দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। গাবতলী, আশুলিয়া, বাইপাইল, সাভার ও নবীনগর এলাকা থেকে আসা বাস চন্দ্রা এলাকা পাড় হয়ে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে ভোগান্তি ছাড়াই চলে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ২৪ হাজার ৭১০টি যানবাহন পারাপার হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বগুড়াগামী এক বাস চালক বলেন, ঈদের আগে এই সময় মহাসড়কে ব্যাপক যানজট থাকতো। কিন্তু সড়ক উন্নয়ন আর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এবার যানজটমুক্ত। কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। স্বাভাবিক গতিতেই গাড়ি চালাচ্ছি।

গতকাল সোমবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, অন্য সময়ের চেয়ে যানবাহন কিছুটা বেড়েছে তবে যানজট ও ভোগান্তি ছাড়াই ঘরে ফিরছে মানুষ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে ময়মনসিংহ অংশে পাঁচটি জেলার মানুষ যাতায়ত করে থাকেন। প্রতি বছর ঈদ যাত্রায় সড়কে বাড়তি যানবাহনের চাপ থাকে। ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়ে কয়েকগুণ। তাই সড়কে যানজট প্রবণ এলাকাগুলোতে বাড়ে ভোগান্তি। ঢাকা থেকে গাজীপুর পার হয়ে ময়মনসিংহ অংশে প্রবেশের পর স্কয়ার মাস্টারবাড়ী, ভালুকা উপজেলার সীডস্টোর বাজার, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, ভরাডোবা, ত্রিশাল উপজেলার ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড ও ময়মনসিংহ বাইপাস এলাকা যানজট থাকে। এছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাগামারা, চেলেরঘাট, বৈলর, চুরখাই বাজার এলাকাতেও যানজট তৈরি হয়। আর বাসস্ট্যান্ড এলাকা পার হতে সময় বেশি লাগায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে উল্টো মহাসড়ক যানজট নেই তবে গতকালের চেয়ে ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে।
শেরপুরগামী বাস চালক আবুল কাশেম বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কোন যানজট নেই এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হচ্ছে না। নির্দিষ্ট সময়েই যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারছি।

এবার ঈদযাত্রায় ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের যাত্রায় নেই কোনো যানজট। তাই যাত্রা পুরোটাই স্বস্তির বলে জানিয়েছেন চলাচলকারী যাত্রীরা। গতকাল সোমবার সকাল থেকে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা। যানবাহনের চাপ বাড়লেও নেই তেমন যানজট। ঈদ কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছেন হাইওয়ে পুলিশের ১৫০ জন সদস্য। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও শৃঙ্খলা বলবৎ রাখতে ঈদেও নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করবেন তারা।

চট্টগ্রামগামী হানিফ পরিবহনের এক যাত্রী জানান, এবার যানজট পাইনি। সুন্দর যাত্রা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোথায়ও বাস থামতে দেখিনি। মাত্র টোলপ্লাজায় থেমেছে। এদিকে চলাচল আরও ঝামেলাহীন করতে মেঘনা সেতুর দ্বিতীয় টোলপ্লাজা উদ্বোধনের ফলে মোট ১২টি টোল বুথ চালু করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান জানান, ঈদে মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে মেঘনা সেতুতে আরও ৬টি নতুন ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) বুথ চালু করা হয়েছে। এ সেতুতে সবগুলো টোল কালেকশন (ইটিসি) আওতায় রয়েছে। এর ফলে এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও যানজটমুক্ত হবে।

হাইওয়ে পুলিশের সূত্র মতে, রমজান মাসজুড়ে প্রতিদিন ২৫ হাজারের মতো যানবাহন এ সড়কে চলাচল করছে। এপ্রিল মাসের শুরু থেকে প্রতিদিন ৩৫ হাজারের মতো যানবাহন চলাচল করছে। ৮ এপ্রিল থেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি হলে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার যানবাহন এ পথে চলাচল করবে। এ সময় গাড়ির চাপ থাকলেও যানজটমুক্ত থাকতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। ৮, ৯ ও ১০ এপ্রিল এ বাড়তি চাপ থাকবে বলে জানা গেছে।

নারায়ণগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল ক্যাম্পের পরিদর্শক (টিআই) শরফুদ্দিন বলেন, আমাদের ১৫০ জন সদস্য সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, যা ঈদেও চলমান থাকবে। ৮ এপ্রিল রাত থেকে ১০ এপ্রিল গাড়ির অতিরিক্ত চাপ থাকলেও আশা করছি কোনো যানজট থাকবে না।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে সাভারের উত্তরবঙ্গগামী বাসের স্ট্যান্ডগুলো। বিশেষ করে বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে হাজার হাজার যাত্রী অপেক্ষা করছেন যানবাহনের জন্য। কেউবা অনেক কষ্টে যানবাহনে উঠে রওনা করছেন গন্তব্যে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক কম বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর, বাইপাইল, শ্রীপুর, জিরানী বাজার ঘুরে দেখা যায়, জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে স্ট্যান্ডগুলো। একদিনই অনেক পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ায় বিশালসংখ্যক মানুষ বাড়ি ফিরতে বাসস্ট্যান্ডে উপস্থিত হয়েছে।

আশুলিয়ার কাঠগড়া থেকে একই কারখানার প্রায় ৩০-৪০ জন শ্রমিক রাজশাহী যাওয়ার জন্য এসেছেন বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে। তাদের মধ্যে একজন বলেন, একসঙ্গে অনেক পোশাক কারখানা ছুটি হয়েছে। আমাদের আশপাশের প্রায় ১৫টি কারখানা ছুটি হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ যাত্রী উত্তরবঙ্গের। সবাই একসঙ্গে বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। স্ট্যান্ডে শুধু যাত্রী আর যাত্রী। হঠাৎ যাত্রী বেড়ে যাওয়ায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে যানবাহনের। আমরা অনেকে এখনো গাড়ি পাইনি। আবার অনেকেই হুড়োহুড়ি করে গাড়িতে উঠেছেন। দেখছি বাড়ি যেতে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

সেলিনা নামের এক শ্রমিক বলেন, একসঙ্গে এত যাত্রী কোথা থেকে এলো, বুঝলাম না। আধাঘণ্টার মধ্যেই যাত্রীতে বাসস্ট্যান্ড ভরে গেছে। যাত্রীর তুলনায় যানবাহন অনেক কম। ফলে অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন। যারা আসছেন, তারা যদি গাড়ি পেতেন, এত যাত্রী জমতো না। যত সময় যাচ্ছে ততো যাত্রী বাড়ছে।

রেলপথ : রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীচাপ বেড়েছে। তবে ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্যে রওনা হতে পেরে খুশি অধিকাংশ ট্রেনের যাত্রীরা। জানা যায়, এদিন নকশিকাঁথাসহ দুয়েকটি ট্রেন ছাড়া প্রায় সব ট্রেনই সময়মতো ছেড়ে গেছে। এছাড়া, নৌপথে ঈদযাত্রার শুরুর দিকে যাত্রী না থাকলেও, এখন কিছুটা বেড়েছে। সকালের দিকে গ্রিনলাইন পরিবহন ৬শ’ যাত্রী নিয়ে ভোলার ইলিশার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। চাঁদপুরসহ কাছাকাছি বিভিন্ন নৌরুটের লঞ্চগুলোও যাত্রী নিয়ে ছেড়েছে। দুপুরের পর থেকে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, হুলারহাট, বরগুনা, রাঙ্গাবালী, চরমন্তাজ রুটের লঞ্চগুলো টার্মিনালে আসার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা লঞ্চে উঠে পড়েছেন। সব লঞ্চ নির্দিষ্ট সময়ে ঘাট ছেড়েছে। লঞ্চ মালিকরা বলছেন, চাপ বাড়লে প্রয়োজনে লঞ্চ বাড়ানো হচ্ছে।

আকাশ পথে যাত্রীর কমতি নেই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের চাহিদা পূরণে আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ রুটে ৪০টি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়াও এয়ারলাইন্সটি ১ থেকে ২০ রমজান পর্যন্ত তার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ রুটের মূল ভাড়ার ওপর ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ ছাড় দিয়েছে।

আকাশপথ : ঈদ উপলক্ষে জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থাটি ঈদের কয়েকদিন আগে ও পরে যাত্রীদের একটি যানজট মুক্ত আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য প্রতি বছর অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে কক্সবাজার ৫৯৯৯ টাকা, বরিশাল ৩৪৯৯ টাকা এবং সিলেট, চট্টগ্রাম, যশোর, রাজশাহী ও সৈয়দপুর ৪৪৯৯ টাকা মূল ভাড়া ঘোষণা করেছে। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এয়ারলাইন্সটি দেশের সাতটি অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ব্যাক্তিমালিকানাধনি বিভিন্ন কোম্পানির উড়োজাহাজও যাত্রী বহন করছে।

সদরঘাটে প্রচণ্ড ভিড় : পদ্মা সেতু চালুর পর সদরঘাটে ভিড় কম। লঞ্চে যাত্রীদের যাতায়াত কমে গেছে। তবে ঈদ উপলক্ষে সরকারি ছুটির প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ। এ দিন পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে বাড়ি ফেরা ঘরমুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। নৌপথে গ্রামে যাওয়া দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের নির্বিঘ্নে পৌঁছে দিতে হাজার হাজার যাত্রী বোঝাই লঞ্চগুলোও নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই ঘাট ছেড়ে গেছে।

গত তিনদিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে পন্টুনগুলোতে বাড়ছে নৌপথে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের উপস্থিতি। সকালে চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী পন্টুনে দেখা যায় যাত্রীদের ভিড়। রোদের তাপ বাড়ায় দুপুরের দিকে ঘাটে যাত্রীর দেখা তেমন না মিললেও বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার মুহূর্তে আবার যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকতে থাকে। বিকেলে যাত্রীদের বেশিরভাগই বরিশালগামী লঞ্চগুলোতে ভিড় করেছেন। এছাড়াও পটুয়াখালী, বগা, ইলিশা এসব রুটেও যাত্রী চাপ দেখা গেছে। তবে বরিশাল রুটে যাত্রী সংখ্যা কম ছিল। পর্যাপ্ত লঞ্চ থাকায় অনেকটা আরামদায়কভাবে বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে আশা করছেন যাত্রীরা।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও এর আশপাশের এলাকায় এদিন বিকেলে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, রিকশা ও প্রাইভেটকারের কারণে প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়। ঘরমুখো যাত্রীদের ব্যাগ-বস্তা হাতে ঘাটের দিকে আসতে দেখা যায়। কেউ যাচ্ছেন পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে, আবার কেউবা একা। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরাই যেন তাদের একমাত্র লক্ষ্য। অনেক লঞ্চের স্টাফ কেবিন বুকিংয়ের জন্য যাত্রী ডাকছেন। অনেকে লঞ্চে কাঁথা-বালিশ দিয়েও ভাড়া আদায় করছেন। এদিন কুলিদেরও বেশ হাকডাক শোনা যায়।

লঞ্চ স্টাফ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত ঈদের মতো এবারও লঞ্চে কেবিনের চাহিদা বেশি। তবে অনেকে লঞ্চ ছাড়ার অনেকটা আগে ঘাটে আসলেও পাচ্ছেন না কেবিন। বাধ্য হয়েই অনেককে ঈদ যাত্রায় ডেকে বসে যাতে হচ্ছে। টিকিটের চাহিদাও অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। ঘাটে ভেড়ানোর কিছু সময়ের মধ্যেই লঞ্চগুলো কানায় কানায় ভরে যেতে দেখা গেছে।

পটুয়াখালীর যাত্রী রাসেল শিকদার বলেন, ভাড়া সামান্য বেশি দিয়ে হলেও কেবিন পেয়েছি। ঈদের সময় ভাড়া তো একটু বেশি নিবেই। পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করব, এই আনন্দটাই অনেক। যাত্রায় কোনো ভোগান্তি পোহাতে হবে না বলে আশা করছি।

ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি সুরভী-৯ লঞ্চের স্টাফ আমিরুল ইসলাম বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাত্রী বেশ বেড়েছে। বেশিরভাগ কেবিন আগে থেকেই বুকিং হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, বরিশাল ও পটুয়াখালী রুটে ৮টি করে লঞ্চ ও অন্যান্য রুটগুলোতে কমপক্ষে ২-৩টি করে লঞ্চ যাবে। যাত্রী চাপ আছে, তবে আশানুরূপ নয়। অন্যান্য সময়ের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ। কাল পরশু চাপটা বাড়বে বলে আশা করছি।

বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. কবীর হোসেন বলেন, লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। যাত্রী চাপ সামলাতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। যাত্রী হয়রানি, ভোগান্তি বা টিকিট কালোবাজারির কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক টার্মিনাল মনিটরিং করছেন।