সুচ থেকে হাতুড়ি সব নিয়ে কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযান

ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন দাবিতে দিল্লি চলো অভিযানের ডাক দিয়েছেন ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানাসহ বিভিন্ন স্থানের কৃষকরা। দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েই তারা দিল্লিতে ঢুকতে চান। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে দিল্লি পুলিশ। খবর এবিপি ও এনডিটিভি।

এর আগে ২০২০ সালেও তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন কৃষকেরা। তাদের দাবির মুখে তিন আইনই বাতিল করা হয়। এবার কৃষকদের মূল দাবি তিনটি- ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য, কৃষিঋণ মাফ ও স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাবের রূপায়ণ।

জানা গেছে, বিক্ষোভের পথ থেকে কৃষকদের সরিয়ে আনতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল কেন্দ্র। সোমবার রাতে চণ্ডীগড়ে কৃষকদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা ও কেন্দ্রীয় ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। তবে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকের পরও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। পরে কৃষকনেতা পাঞ্জাব কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সারওয়ান সিংহ পান্ধের জানান, তাদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযানে শামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। কারণ সরকার আমাদের কোনো কথাই শুনেনি।

ফলে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ শুরু হয় কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযান। পাঞ্জাবের ফতেগড় সাহিব থেকে অভিযান শুরু হয়। মিছিলের অগ্রভাগে ছিল কালো ত্রিপলে ঢাকা অজস্র ট্র্যাক্টর। শুধু পাঞ্জাব থেকেই ১৫০০টি ট্র্যাক্টর, ৫০০ গাড়ি নিয়ে দিল্লি অভিযানে আসেন কৃষকেরা। ওইসব গাড়িতেই প্রায় ছমাসের খাবার নিয়ে এসেছেন তারা।

পাঞ্জাবের গুরদাসপুরের কৃষক হরভজন সিংহ বলেন, সুচ থেকে হাতুড়ি, সবকিছু সঙ্গে নিচ্ছি আমরা। ব্যারিকেড ভাঙার যন্ত্রও সঙ্গে যাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে ছ’মাসের খাবার, পর্যাপ্ত জ্বালানি রয়েছে। যত দিন না পর্যন্ত আমাদের দাবিদাওয়া মেনে না নেওয়া হবে, ততদিন আমরা দিল্লি থেকে সরব না।

২০২০ সালে দিল্লির সীমানায় যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন কৃষকেরা, সেই আন্দোলন চলেছিল ১৩ মাস ধরে। এবার আবারো সে ধরনের কোনো কিছু হবে কি না, তারই জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

অবশ্য বিষয়টি নিয়ে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে একাধিক পদক্ষেপ নেয় স্থানীয় প্রশাসনও। হরিয়ানা সরকার দু’টি বড় স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী জেলে পরিণত করে। কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে যেন দায়ীদের আটক করে ওই দু’টি জেলে রাখা যায়।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় পাঁচ হাজার কৃষক, দেড় হাজারেরও বেশি ট্র্যাক্টর এবং ৫০০ গাড়ি নিয়ে দিল্লি অভিমুখে রওনা হওয়ার পর আম্বালার কাছে প্রথম বাধার মুখে পড়ে তারা। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মধ্যবর্তী শম্ভু সীমানায় প্রতিবাদী কৃষকদের রুখতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোঁড়া হয়। কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামানও ব্যবহার করা হয়।

দিল্লি পুলিশের ডিসি (উত্তর-পূর্ব) অঙ্কিত সিংহ জানান, সব রকমের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়া ট্র্যাক্টর-ট্রলির প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের ঠেকাতে দু’হাজার পুলিশকর্মীসহ সশস্ত্র বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে।