বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই আগামী ১৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদ। এরইমধ্যে অনেকেই তাদের কোরবানির পশু কিনে ফেলেছেন। অনেকেই কিনবেন। এ সময় যারা কোরবানির পশু কিনতে বিভিন্ন হাটে যান তাদের মধ্যে বেশির ভাগেরই পশু নির্বাচন বা দরদাম করার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে না বললেই চলে।
অথবা থাকলেও খুব কম। কারণ বছরে শুধু এই ঈদকে কেন্দ্র করেই পশুর হাটে যাওয়া হয় অনেকের। তাই পশু নির্বাচনের কিছু মৌলিক বিষয় জানা থাকলে নির্বাচনের ভুলভ্রান্তি কম হবে এবং একটি উৎকৃষ্টমানের পশু কেনা সম্ভব হবে। পাশাপাশি অনেকে এখন খামার থেকে সরাসরি গরু কিনে থাকেন। তবে হাট কিংবা খামারে যেখান থেকেই কোরবানির গরু বা পশু কেনা হোক না কেন এ বিষয়ে আমাদের একটু যত্নবান হতে হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোরবানিতে বেশির ভাগ মানুষই চর্বিযুক্ত নাদুস-নুদুস পশু নির্বাচন করে থাকেন। যা একটি ভুল ধারণা বা ব্যাপারটা এতটা গভীরে কখনো ভাবিনি আমরা। স্বাস্থ্যগত দিক চিন্তা করলে দেখা যায়, পশুর চর্বি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি করে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ও শারীরিক ওজন বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রাখে। পশুর চর্বিতে প্রচুর পরিমাণে খারাপ কোলেস্টেরল বিদ্যমান থাকায় তা হৃৎপিন্ডে ব্লক তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এত সব বিবেচনা করলে কম চর্বিসম্পন্ন পশু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে গবেষকরা বলছেন, হরমোন প্রয়োগে মোটা-তাজা করা পশুর মাংস খেলে মানুষের ব্রেস্ট, কোলন এবং ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদিও মোটাতাজাকরণের জন্য স্বীকৃত স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি রয়েছে কিন্তু গরুকে দ্রুত মোটা ওজনদার করার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই কোনো কোনো খামারি অনৈতিকভাবে স্টেরয়েডসহ বেশ কিছু হরমোন প্রয়োগ করে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্য থাকে বেশি ওজন মানেই বেশি মাংস; বেশি মাংস মানেই বেশি লাভ। যা মোটেও ঠিক নয়। এটা সত্য যে বর্তমানে এ ধরনের অসাধু কর্মকান্ড অনেকটাই কমে এসেছে।
সুস্থ গরু চেনার উপায়:
অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মোটাতাজাকরণ ওষুধ খাইয়ে স্বাভাবিকের চাইতে অতিরিক্ত মোটাতাজা করে হাটে নিয়ে আসেন। এসব গরু খুব একটা নড়াচড়াও করে না, ঝিমাতে থাকে। অন্যসব গরুর চেয়ে অপ্রত্যাশিত ফোলা থাকে। লক্ষ্য করুন আপনার পছন্দের গরু চটপটে কি না? কারণ, স্টেরয়েড খাওয়ালে গরু নড়াচড়ার বদলে ঝিম মেরে থাকবে। এ ছাড়া স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর ঊরুতে প্রচুর মাংস থাকে। তাই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
শিং ভাঙা, লেজ কাটা, জিহ্বা, ক্ষুর, মুখ, গোড়ালি খত আছে কি না তা ভালো করে দেখে নিতে হবে।
সুস্থ গরু চিনতে হলে পাঁজরের হাড়েও খেয়াল করতে হবে। সুস্থ গরুর পাঁজরের হাড়ে উঁচুনিচু থাকে এবং চোখে নড়াচড়া করবে।
এ ছাড়া যদি গরুর নাকের ওপরটা ভেজা ভেজা থাকে তাহলে বুঝতে হবে গরু সুস্থ। এছাড়া গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বা দিয়ে টেনে নেয় তাহলেও বোঝা যায় গরুটি সুস্থ। কারণ অসুস্থ পশু খাবার খেতে চায় না।
গরুর কুঁজ মোটা ও টানটান থাকলে বুঝতে হবে গরুটি সুস্থ।
গরুর পাঁজরের হাড়ে যে তিন কোনা গর্ত থাকে যাকে ফ্লায়েন্ট জয়েন্ট বলে। তাতে কোনা রয়েছে কি না সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
গরুর শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে বুঝবেন গরুটি অসুস্থ।
সুস্থ গরুর চামড়ার ওপর দিয়ে কয়েকটা পাঁজরের হাড় বোঝা যাবে।
সুস্থ গুরু বাঁধা অবস্থায় প্রায়ই যেনতেনভাবে ছুটতে চাইবে। ঘন ঘন লেজ নাড়বে। হাঁকডাকে জোরালো হবে। এ দুরন্তপনার মধ্যেও পরক্ষণেই আবার সামনে রাখা খাদ্যে মুখ ডোবাবে।
সুস্থ গরু চেনার আরেকটি উপায় হচ্ছে মুখে জাবর কাটবে। তাই হাট কিংবা খামার যেখান থেকেই গরু কিনুন না কেন, এসব বিষয়ে যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে।