সোমবার হরতালের ডাক বিএনপির

সরকার পতনের একদফা দাবিতে আগামী ১৮ই ডিসেম্বর সোমবার হরতাল ডেকেছে বিএনপি। সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে সর্বাত্মকভাবে হরতাল কর্মসূচি পালিত হবে।

আজ সন্ধ্যায় ভার্চ্যুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রিজভী বলেন, প্রকাশ্যে দর কষাকষি করে সিট ভাগাভাগির একটা নির্বাচন নিয়ে প্রতিদিন রকমারি নাটক নাটিকা দেখতে দেখতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সর্বসাকুল্যে একটিই দল আর এক নেত্রীর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ আর নৌকা, ‘আমরা আমরাই’ নির্বাচন করার জন্য দেশটাকে মগের মুল্লুক বানিয়ে ফেলেছেন তারা। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের জেলে পুরে, বাড়িঘর, দোকান-পাট, ব্যবসা-বানিজ্য, আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে এলাকা ছাড়া ফেরারি জীবনে নিক্ষেপ করে, জনগণকে ‘জিম্মি’ দশায় রেখে ৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের পাঁয়তারা চলছে।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে সরকার যে, পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে বাড়ি ছাড়া থাকায় তার প্রতিবন্ধী বোন খাবার না পেয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, যে করুণ দৃশ্য ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে জনগণের বিন্দুমাত্র আগ্রহ-উৎসাহ না থাকলেও গণভবন-আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঢাক-ঢোল বাজানো হচ্ছে আর গলাবাজি করে ওবায়দুল কাদের ও হাসান মাহমুদরা গলা ফাটিয়ে ফেলছেন। আর জনপদগুলোতে নিজেরা নিজেরা মারামারি-খুনোখুনি, অস্ত্রের ঝনঝনানি, হুমকি-ধামকিতে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। মানুষ আর সহ্য করতে পারছে না। খুদকুঁড়ো পার্টি এবং বিভিন্ন দল থেকে অচ্ছুত লোকজন হায়ার করে নিয়ে কথিত নির্বাচনকে উত্তেজনা ও তথাকথিত প্রতিযোগিতাপূর্ণ করতে নিজেদের লোকদের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করে হাতে হাতে দিতে চান ওবায়দুল কাদেররা। কিন্তু তিনি আওয়ামী মাফিয়াদের এই সশস্ত্র পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা না বলে উল্টো বিএনপির দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। নির্বাচনে অস্ত্রবাজি করতে তাদের আরেকটি উদ্দেশ্যে হলো ভোটারা যেন ভোট কেন্দ্রে না যায়। যা ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী প্রকাশ্যেই জনসভাতে ভোটারদের আসতে নিষেধ করেছেন।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গণভবন থেকে পাঠানো সংসদ সদস্য করার তালিকা নির্বাচন কর্মকর্তারা নির্বিঘ্নে পাঠের আয়োজন চলছে। আপনারা গতকাল দেখেছেন একদল চিহ্নিত আওয়ামী সন্ত্রাসী এবং চাপাতি-বন্দুক লীগ পরিবেষ্টিত হয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘খবর পেয়েছি, বিএনপি নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য অস্ত্রের মহড়া দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা অস্ত্র জোগাড় করছে। বিএনপির অস্ত্র সংগ্রহের খবর গোয়েন্দাদের কাছেও আছে।’ ওবায়দুল কাদের সাহেব গুজববাজ এবং মিথ্যা কথা বলার শাহেনশাহ, কী হাস্যকর আজগুবি বয়ান। আসলে তারা দলদাস পুলিশকে দিয়ে পরিকল্পনা মতো বিএনপি নেতা-কর্মীদের অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে নিজেদের তৈরি করা নাশকতার মাত্রা বাড়াতে চায়। জঙ্গী অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার নাটক সাজিয়ে বিদেশীদের চোখে ধুলো দিতে চায়। ওবায়দুল কাদেরদের সরকারের গোয়েন্দারা এতো কিছু জানে অথচ ১১ বছরেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার খবর উদ্ধার করতে পারে না। এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ ১০১ বার পিছিয়েছে। কারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রাষ্ট্রের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার লোপাট করল তা জানতে পারেনি। এই আওয়ামী গোয়েন্দাদের কাজ হলো আষাঢ়ে গল্প বানানো। দেশের মানুষ জানে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের নেতারা প্রতিটি এলাকায় অস্ত্রের ডিপো বানিয়েছে। তারা মানুষ খুন করছে। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। লাশ ফেলছে। তুলে নিয়ে গিয়ে গুলী করছে।

রিজভী বলেন, আন্দোলনকারীদের ওপর গুলী ছুঁড়ছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের রুটি রুজির সংগ্রাম রুখতে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি দিচ্ছে। ছাত্রলীগের নামই হয়েছে বন্দুক-চাপাতি লীগ। প্রায়শই পত্রিকার পাতায় আওয়ামী বন্দুকলীগের সশস্ত্র মহড়া-অস্ত্রবাজির সচিত্র খবর বেরুচ্ছে। নান্দাইলে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করার দৃশ্য সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। আর ওবায়দুল কাদের বলছেন, বিএনপি নাকি নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য অস্ত্রের মহড়া দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ যেন চোরের মায়ের বড় গলা। বিএনপিসহ সকল বিরোদীদল আন্দোলন করছে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। দেশকে বাকশাল থেকে গণতন্ত্রে ফেরানোর জন্য। আমাদের আন্দোলন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। বিএনপি সন্ত্রাস সহিংসতা নাশকতার বিরুদ্ধে। যুগ যুগ ধরে প্রমাণিত হয়েছে সন্ত্রাস সহিংসতা নাশকতার একচেটিয়া কৃতিত্ব বা পেটেন্ট আওয়ামী লীগের। এই হাস্যকর ভুয়া নির্বাচন বানচাল করবে ভোটাররা। দেশে কোনো সচেতন মানুষ কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। ওদেরকেই ভোট কেন্দ্রে বসে বসে মাছি তাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হুমকি দিয়েছেন, ‘ভোটবিরোধী কর্মকাণ্ড চালালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আগামী সোমবারের পর ইসির নির্দেশনা না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ আমার প্রশ্ন এই সরকারের দলদাস আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং ভুয়া নির্বাচন কমিশন যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা কোন ক্ষমতাবলে, কোন আইনে, সংবিধানের কোন ধারাবলে দিয়েছে? একটা নীলনকশার পাতানো নির্বাচন নির্বাচন খেলাকে সুরক্ষা দিতে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যে পরিপত্র জারি করেছে তা সম্পূর্ণরূপে একাধারে অনৈতিক, অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী। এটা জনগণের মৌলিক অধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন। সংবিধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সভা-সমাবেশের অধিকার গলাটিপে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে।

রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন শপথ গ্রহণ করেছে সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য। শুধু জরুরি অবস্থা জারির সময় সংবিধানের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪২ ধারা সমূহের কতিপয় বিধান অর্থাৎ মৌলিক অধিকার স্থগিত করা যায়। বর্তমানে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় নাই। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই মৌলিক অধিকার স্থগিতকরণের কোনো কর্তৃপক্ষ প্রজাতন্ত্রের নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্র সরাসরি সংবিধানের ৩১-৪১ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।

দেশের জনগণ সংবিধান পরিপন্থী কোনো নিষেধাজ্ঞা মেনে নেবে না। অনতিবিলম্বে এই বেআইনি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবি করেন রিজভী।