
সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সম্প্রতি করা যুগান্তকারী চুক্তি ইয়েমেনের বছরব্যাপী যুদ্ধের একটি রাজনৈতিক মীমাংসা আনতে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘে ইরানের মিশন। খবর আরব নিউজ।
চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরব গত শুক্রবার কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়। এর ফলে দুই আঞ্চলিক শক্তিশালী দেশের মধ্যে ছয় বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা উত্তেজনা প্রশমিত হবে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা আশা প্রকাশ করছেন।
জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন বলছে, রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কের পুনঃপ্রবর্তন দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক এই তিন স্তরেই গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যেই এই সম্পর্কান্নয়ন পশ্চিম এশিয়া ও ইসলামী বিশ্বের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে এটি ইয়েমেনের ব্যাপারে একটি জাতীয় সংলাপ শুরু এবং ইয়েমেনে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনে সহায়তা করবে।
২০১৫ সালে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে সৌদি আরব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেন সরকারকে সমর্থন দেয়। সৌদি সমর্থনপুষ্ট সরকারি দল বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে। অন্যদিকে হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয় ইরান। ফলে ইয়েমেনকে ঘিরে ছায়া যুদ্ধে নামে দেশ দুটি।
তবে গত বছর ইয়েমেনের সব পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। সে মেয়াদ গত অক্টোবরে শেষ হলেও কোনো পক্ষই তীব্র সংঘাতের পক্ষে হাঁটেনি। এরই মধ্যে সৌদি আরব -ইরানের এই চুক্তিতে ইয়েমেনের পরিস্থিতি আরও উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে ইয়েমেনের পক্ষগুলো চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়েছে।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের মুখপাত্র ও প্রধান আলোচক মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক ফিরে আসা দরকার। তাহলে এর মাধ্যমে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশি হস্তক্ষেপ থেকে মুসলিম বিশ্ব তার হারানো ঐতিহ্য, নিরাপত্তা ফিরে পাবে।
অন্যদিকে ইয়েমেনের রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং সাবেক সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রধান আবদেল-বারি তাহের সৌদি আরব-ইরান চুক্তিকে ইতিবাচক প্রথম পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন। সংঘাতের অবসান এবং এ অঞ্চলের অন্যত্র উত্তেজনা কমাতে তেহরান ও রিয়াদ উভয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধকে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটগুলোর অন্যতম বলে আখ্যায়িত করেছে। গত আট বছরে এই গৃহযুদ্ধ অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিয়েছে।