সৌদি আরবে রমজানে বিধিনিষেধ, হতাশ মুসলিমরা 

পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে সৌদি সরকার মসজিদে নামাজ ও দোয়ার সময় লাউডস্পিকার ব্যবহার, ইফতার আয়োজনসহ বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পরিচয়পত্র ছাড়া ইতিকাফে বসাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারি এসব বিধিনিষেধ সৌদি আরবের জনজীবন থেকে ইসলামকে দূরে সরানোর পাঁয়তারা মনে করছেন অনেকে।

বিশ্লেষক সামি হামদি বলেন, সৌদি সরকারের এসব পদক্ষেপ দেশটির নতুন ধরনের এক পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা বলেই বলে মনে হচ্ছে। এটা এমন পরিচয় যার কেন্দ্রে ইসলাম থাকবে না।

সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ৩ মার্চ শুক্রবার এক প্রজ্ঞাপনে রমজান উপলক্ষে আরোপিত বিধিনিষেধের তালিকা প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ১৪৪৪ হিজরির পবিত্র রমজান মাসকে বরণ করতে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি হিসেবে ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী শেখ আবদুল লতিফ আল-শেখ মুসল্লিগণকে সেবাদানের জন্য মসজিদগুলোকে প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছেন।

সৌদি আরবের মসজিদগুলোকে রমজানের জন্য ‘প্রস্তুত করতে’ মন্ত্রণালয় ১০-দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। গোড়াতে নিরীহ ও সাধারণ নির্দেশনার মতো করে শুরু হলেও প্রথম দুটি অনুচ্ছেদের পরই বিষয়টি অন্যদিকে মোড় নিতে থাকে।

সবার শুরুতে বলা হয়েছে- মসজিদে ইমামগণ দেরিতে পৌঁছতে পারবেন না। আজান যথাসময়ে দিতে হবে। এর পরই বলা হয়েছে, রমজানে মুসল্লিদের শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে তারাবীহ এমনভাবে শেষ করতে হবে যাতে তারা সেহরির আগে বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত সময় পান। একইভাবে রমজানের, বিশেষত শেষ দশদিন মসজিদে জামাতে তাহাজ্জুদ আদায়ের যে রেওয়াজ রয়েছে, সেক্ষেত্রেও বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নামাজের বিরতিতে মোনাজাত সংক্ষিপ্ত রাখতেও বলা হয়েছে।

বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখার ছদ্মাবরণে কার্যত তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামাজ সংক্ষিপ্ত করতে বলেছে বলে মতপ্রকাশ করেন সামি হামদি। সামাজিক মাধ্যমে একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন সৌদি আরবের ভেতরের-বাইরের অনেকে।

নতুন নির্দেশনায় মহানবীর (স.) পাঠকৃত দোয়ার মধ্যে মোনাজাত সীমিত রাখতে বলা হয়েছে। এ বিষয়টির সমালোচনা করেছেন অনেকে। তারা বলেন, সাধারণত রমজানে সৌদি আরবের মসজিদগুলোতে ইমাম সাহেবগণ ফিলিস্তিনের জন্য দোয়া করেন, আরব বিশ্ব ও মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনায় দোয়া করেন। মোহাম্মদ বিন সালমান এ বিষয়গুলো বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছেন।

সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে- অভিভাবকরা মসজিদে শিশুদের সঙ্গে নিতে পারবেন না, মসজিদে লাউডস্পিকার ব্যবহার করা যাবে না, নামাজ ও তারাবীহ সম্প্রচার করা যাবে না, আইডি বা পরিচয়পত্র ছাড়া ইতিকাফ পালন করা যাবে না। ইফতারের জন্য চাঁদা তোলা যাবে না। মসজিদে ইফতার আয়োজন করা যাবে না।

সামি হামদি বলেন, সৌদি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রকাশিত এসব বিধিনেষেধ আদতে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশনা। এসব বিধিনিষেধে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে তিনি এ বছর সৌদি আরবে রমজানকে কতটা সীমিত করতে যান। সৌদি সরকারের ভিশন ২০৩০ রূপকল্পের অংশ হিসেবে ইসলামকে জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করার যে পরিকল্পনা তিনি নিয়েছেন, এসব বিধিনিষেধ তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।