আরবে যুগ যুগ ধরে যুদ্ধ-বিগ্রহ চলছিল। হস্তী বাহিনীর ঘটনার পর যে প্রসিদ্ধ যুদ্ধের ঘটনা সামনে আসে, তা হারবুল ফুজ্জার নামে খ্যাত। এ যুদ্ধ কুরায়শ এবং বনী কায়স গোত্রের মধ্যে সংঘটিত হয়। প্রথমদিকে বনী কায়স কুরায়শের উপর প্রাধান্য লাভ করে। পরে কুরায়শ বনী কায়সের উপর জয়লাভ করে। সব শেষে সন্ধি চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। কোন কোন দিন কিশোর মুহাম্মদ (সা)-ও চাচাদের নির্দেশের কারণে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু যুদ্ধে লিপ্ত হননি। আল্লামা সুহায়লী বলেন :
“এ যুদ্ধে নবী করীম (সা) নিজ চাচাদের সঙ্গে শরীক হননি। অথচ এ সময় তিনি যুদ্ধে যাওয়ার বয়সে উপনীত হয়েছেন। তিনি নিজ পিতৃব্যদেরকে তীর উঠিয়ে দিতেন; তিনি স্বয়ং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন না। কেননা এ যুদ্ধ হারবুল ফুজ্জার অর্থাৎ আল্লাহর অবাধ্য মানুষদের যুদ্ধ ছিল। এটি এমন মাসে সংঘটিত হয়েছিল, যে মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ ছিল অপরাধ অন্যায়, এমনকি হারাম। এ যুদ্ধকে ‘হারবুল ফুজ্জার’ এজন্যে বলা হয়। এতে উভয়পক্ষই আল্লাহর অবাধ্য ছিল। অন্যথায় মুমিনদেরকে যুদ্ধ-জিহাদের অনুমতি তো শুধু আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার এবং আল্লাহর কালেমার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যেই দেয়া হয়েছিল।
ইবন হিশাম বলেন, এ সময়ে হযরতের বয়স চৌদ্দ অথবা পনর বছর ছিল। আর মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেন, এ সময়ে হযরতের বয়স ছিল বিশ বছর।
নবী করীম (সা)-এর হিলফুল ফুযূলে অংশগ্রহণ
যুদ্ধ-বিগ্রহ আরব ভূ-খণ্ডে দীর্ঘদিন যাবত চলে আসছিল। কিন্তু তা কতদূর বরদাশত করা যায়? ফুজ্জার যুদ্ধের পরে কতিপয় চিন্তাশীল ব্যক্তির অন্তরে এ ভাব জাগলো যে, পূর্ববর্তী জামানায় যুদ্ধ বিগ্রহ ও ধ্বংসলীলার অবসানকল্পে যেমনভাবে ফযল ইবন ফুযালা, ফযল ইবন উদায়া এবং ফুযায়ল ইবন হারিস একটি শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাদের নামানুসারে সেই শান্তিচুক্তি ‘হিলফুল ফুযুল ” নামে খ্যাত ছিল, শান্তির লক্ষ্যে অনুরূপভাবে দ্বিতীয়বার চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন।
শাওয়াল মাসে যখন হারবুল ফুজ্জারের ধারাবাহিকতা শেষ হয়ে গেল। অতঃপর যুদ্ধ নিষিদ্ধ মাস যিলহজ্জ শুরু হলো, তখন ঐ হিলফুল ফুযুলের নবায়ন শুরু হলো এবং সর্বপ্রথম যুবায়র ইবন আবদুল মুত্তালিব ঐ শপথ ও চুক্তির নবায়নের লক্ষ্যে বনী হাশিম ও বনী তায়মকে আবদুল্লাহ ইবন জুদআনের গৃহে সমবেত করলেন। আবদুল্লাহ ইবন জুদআন সবার জন্য খাদ্য প্রস্তুত করালেন। ঐ সময় তারা নির্যাতিত মযলুমদের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গিকারবদ্ধ হলেন। আত্মীয়-অনাত্মীয়, নিজ গোত্র, ভিন্ন গোত্র, দেশী-বিদেশী নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষের সাহায্য ও নিরাপত্তাদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন।
নবী করীম (সা) ইরশাদ করেন : সে সময় আমিও আবদুল্লাহ ইবন জুদআনের গৃহে উপস্থিত ছিলাম। ঐ শপথের পরিবর্তে যদি আমাকে লালবর্ণের উটও দেয়া হতো, তাও আমি অপসন্দ করতাম। এখন ইসলামী যুগেও যদি অনুরূপ একটি শপথনামা (চুক্তি)-র জন্য আমাকে আহ্বান করা হয়, তা হলে আমি অবশ্যই তা কবূল করবো।”
সূত্র: সীরাতুল মুস্তফা সা.
সংকলনে: আহমাদ আল গাজী