
দফায় দফায় হামলার পর এবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে লাঠিসোটা নিয়ে ২০-২৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এ হামলা চালায়। এসময় সেখানে চিকিৎসাধীন আহতদের সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। অনেকে ভয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে আশ্রয় নেন।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হেলমেট পরে, লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢামেকে প্রবেশ করে। এসময় অনেকের হাতে রড ও চাইনিজ কুড়াল দেখা যায়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর আবারও হামলা চালায়।
এছাড়াও ঢামেকে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সও ভাঙচুর করে তারা। পরবর্তীতে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের জরুরি বিভাগে ঢুকতে বাধা দেয়। এসময় তারা বেশ কয়েকজন সাংবাদিকদের ওপরে চড়াও হয়।
আনসার সদস্যরা মাইকিং করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বের হয়ে যেতে বলেন। প্রায় ১০ মিনিট মারধরের পর ৭টা ২৭ মিনিটে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যায়।
এরপর হাসপাতাল ভবনের দরজা বন্ধ করে দেয় হাসপাতালের কর্মীরা। পরে আবারও ছাত্রলীগ হামলা শুরু করেন। এ সময় বেশিরভাগ ছাত্রলীগ কর্মী হেলমেট পরে ছিলেন, তাদের হাতে লাঠি ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মেডিকেলের জরুরি বিভাগ থেকে বের হয়ে যান।
এর আগে বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে সাংবাদিকসহ দুইশ’ শিক্ষার্থী আহত হন। বিকাল সাড়ে ৩টার পর থেকে চিকিৎসা নিতে ঢামেকে আহত শিক্ষার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের ভেতরে শোডাউন ও ইটপাটকেল ছোড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের একদল কর্মী শহিদ মিনার থেকে মেডিকেলের দিকে আসছিলেন। মেডিকেলের সামনে শিক্ষার্থীদের জটলা দেখতে পেয়ে তারা ধাওয়া দেয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। ইটের আঘাতে একজন পথচারী আহত হন।
পরে লাঠিসোটা নিয়ে বিকাল ৫টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত মেডিকেলের ভেতরে-বাইরে শোডাউন দেয় ছাত্রলীগ। এ সময় ঢামেকের বাইরের রাস্তায় আহতের সঙ্গে আসা একদল শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। পরে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আহত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছি। ছাত্রলীগ এখানে এসেও আমাদের ওপর হামলার চেষ্টা করছে। এমনকি যারা আসছেন হাসপাতালের পথে, তাদেরকেও হামলা করছেন।
এসময় ওই এলাকায় ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মেডিকেলের বাইরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছেন। সেখানে পুলিশের কোনো সদস্য দেখা যাচ্ছে না। তবে সন্ধ্যার দিকে জরুরি বিভাগে আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।