হিংসা একটি আত্মিক অসুস্থতা

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ,الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَالصَّلوةُ وَالسَّلَامُ عَلَى سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ سَيِّدِنَا وَمَوْلَنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى الِهِ وَأَصْحَابِهِ أَجْمَعِينَ، اما بعد:

আল্লাহর ইবাদতকারী অর্থাৎ নামায আদায়কারী, রোযাদার, হজ পালনকারী এবং আল্লাহর যিকিরকারীদের উচিত, আল্লাহর মাখলুকদেরকে ভালোবাসা। মহাব্বত করা। ইবাদতকারী যদি চায়-আল্লাহর দরবারে তার ইবাদত কবুল হোক, এর পরিপূর্ণ উপকারিতা সে লাভ করুক এবং যিকিরের রং বা স্বাদ তার আমলে প্রকাশ পাক, তাহলে তার জন্য অন্যান্য জরুরী বিষয়ের সাথে আল্লাহর মাখলুক এবং আল্লাহর বান্দাদের সাথে মহাব্বত ভালোবাসা রাখতে হবে। অন্তরে ভালোবাসা থাকা; বাস্তবে পরিপূর্ণ ঈমানের দলিল। ভালোবাসা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রত্যেকের কল্যাণকামী হওয়া। অন্তরে কারো ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ না করা। এটাই ভালোবাসার আলামত। পরিপূর্ণ মুমিন ঐ ব্যক্তিকেই বলা হয়, যে আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণকামী হয়। আর যে ব্যক্তি অন্যদের ব্যাপারে বিদ্বেষ ও অকল্যান পোষণ করে, তাহলে বুঝা গেল সে পরিপূর্ণ মুমিন নয়।

হিংসা থেকে বাঁচো

তোমার অন্তর যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, অসুস্থতা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, অকল্যাণকামিতা। যাকে ‘হিংসা-বিদ্বেষ’ শব্দ দ্বারাও ব্যক্ত করা হয়- তাহলে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। অর্থাৎ আল্লাহর বান্দাদের শত্রুতা যদি অন্তরে থাকে, তাহলে তা এমন অসুস্থতা; যার ব্যাপারে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

وَعَنِ الأَبَكْرِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ: وَبُ إِلَيْكُمْ دَاهُ الْأُمَمِ قَبْلَكُمُ الْحَسَدُ الْبَغْضَاءُ فِي الْحَالِقة

হযরত যোবায়ের রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের পূর্বেকার উম্মতদের অসুস্থতা তোমাদের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে। তা হচ্ছে হিংসা-বিদ্বেষ। যা ধ্বংসকারী। (তিরমিযি, আবওয়াবু সিফাতিল কিয়ামাতি, হাদিস নং-২৫১০)

হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: হিংসা ও বিদ্বেষের অসুস্থতা তোমাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অসুস্থতা পূর্বেকার উম্মতদেরও ছিল। যেভাবে শরীরের অসুস্থতা শরীরকে দুর্বল করে দেয় এবং মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। অন্তরের এই অসুস্থতা পূর্বেকার উম্মতদের হয়েছিল। আত্মিকভাবে তাদেরকে মৃত্যুর ঘাটে পৌঁছে দিয়েছিল এবং আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করেছে।

ঈর্ষা ও হিংসার মধ্যে পার্থক্য

হিংসা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অকল্যাণকামিতা। অর্থাৎ এমন ইচ্ছা পোষণ করা যে, অন্যের নিকট যে নেয়ামত রয়েছে, তা থেকে সে বঞ্চিত হয়ে যাক। চাই সে নেয়ামত সে লাভ করুক বা না করুক। যার মধ্যে এমন অবস্থা তৈরি হবে, বুঝে নিবে-সে অকল্যাণকামী। হিংসার অসুস্থতা তাকে গ্রাস করে নিয়েছে। এর বিপরীত-যদি সে এমন ইচ্ছা পোষণ করে যে, হে আল্লাহ! এ নেয়ামত আমিও লাভ করি। তাহলে এর মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। এটা হচ্ছে ঈর্ষা।

খারাপ তো হিংসার মধ্যে। উদাহরণস্বরূপ, অন্যকে দেখছো যে, সে ইবাদত করে। দুনিয়াতে তার অনেক সম্মান রয়েছে। তাকে আল্লাহ তায়ালা ধন-সম্পদও দিয়েছেন। রাজনৈতিকভাবেও সে ভালো অবস্থানে রয়েছে। তোমার মনের ইচ্ছা যে, এ সমস্ত নেয়ামতসমূহ তার থেকে ছিনিয়ে নেয়া হোক। এটাই হিংসা। কিন্তু যদি মানুষ চিন্তা করে- আল্লাহ তায়ালা যে নেয়ামতসমূহ তাকে দিয়েছেন, হে আল্লাহ। এই সমস্ত নিয়ামতসমূহ আমাকেও দান করুন। এর মধ্যে কোনো খারাপী নেই। আল্লাহর ভান্ডারে কোনো কিছুরই কমতি নেই। এমনিভাবে তুমি আরেকজন ইলমওয়ালা ব্যক্তিকে দেখলে এবং দোয়া করলে যে, হে আল্লাহ! আমাকেও এমন ইলম দান করুন। অমুক ব্যক্তি এমন আমল করে, হে আল্লাহ! আমাকেও তার মত আমলওয়ালা বানিয়ে দিন। এগুলোতে কোনো সমস্যা নেই।

হিংসা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে নেয়ামত অন্যের নিকট রয়েছে, তার সম্পর্কে এই ইচ্ছা পোষণ করা- যাতে সে নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। চাই সে নিয়ামত তুমি লাভ করো বা না কর। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, তুমি অকল্যাণকামী হয়ে গিয়েছো। এটাকেই হিংসা বলে। আর হিংসা এমন অসুস্থতা, যা মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে।

হিংসুক হিংসার আগুনে জ্বলে

এটা অনেক বড় একটি বিপদ। আল্লাহর ক্রোধ। হিংসুক কারো সম্মান দেখতে পারেনা। আল্লাহ যাকে সম্মান দান করেন, সে সুখে-শান্তিতে নিজের ঘরে বসবাস করে। আর হিংসুক নিজের ঘরে হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে। হিংসুক অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি যে অন্যকে বঞ্চিত দেখতে চায়, এটা তার ওপর আল্লাহর ক্রোধ।

হিংসুকের অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর মুক্তি

হিংসুক সবসময় অকল্যানকামিতায় লিপ্ত থাকে। শত্রুতাবসত-আল্লাহ জানে-সেকী কি কাজ করে বসে। এ কারণে আদেশ দেয়া হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: قل اعوذ برب الفلق অর্থাৎ হে নবী! আপনি বলে দিন, আমি সকাল সন্ধ্যা আশ্রয় প্রার্থনা করছি (অর্থাৎ আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি, যিনি আসমান জমিনের মালিক এবং পালনকর্তা) এবং শেষে বলা হয়েছে : من شر حاسد اذا حسد, অর্থাৎ হিংসুকের হিংসা থেকে (আশ্রয় প্রার্থনা করছি) যখন সে হিংসা করে।

হিংসুকের অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর সাহায্য। প্রাথনার হুকুম এই কারণে করা হয়েছে, হিংসুক কদমে কদমে, রাত দিন তোমার অকল্যাণকামিতায় লিপ্ত। আল্লাহ তোমাকে যে কল্যাণ দান করেছেন, তা দেখে সে ছটফট করে। তুমি কোনো সমস্যায় পড়লে সে খুশি হয় এবং বগল দাবাতে থাকে। এই কারণে তার অনিষ্টতা থেকে বাঁচতে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো।

সুত্র: আল্লামা সাইয়েদ আরশাদ মাদানী দা. বা. -এর ইসলাহী বয়ান।