হুসাইন আহমদ মাদানী এডুকেশনাল ট্রাস্ট: বহুমুখী কল্যাণের ফল্গুধারা

পয়গাম ডেস্ক :

মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী এডুকেশনাল ট্রাস্ট দেওবন্দ— একটি শিক্ষা ও বহুমুখী কল্যাণ-ট্রাস্ট। আওলাদে রাসুল, শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি রহ.-এর নামানুসারে মুসলমানদের শিক্ষা এবং সামাজিক প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য রেখে ২০০০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠা করেন শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি রহ.-এর ছোট সাহেবজাদা হযরত মাওলানা আসজাদ মাদানি দা. বা.। ট্রাস্টটি শুরু থেকেই এর উদ্দেশ্য এবং কৌশলগুলিতে অত্যন্ত সক্রিয়। পুরো ভারতজুড়ে নিঃস্ব মুসলমানরা ট্রাস্টের সুফল গ্রহণ করছে। এই ট্রাস্ট ভারতের অনুন্নত এবং পিছিয়ে পড়া অঞ্চল— বিশেষ করে ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গে কাজ করে থাকে।

এই ট্রাস্ট নিম্নবিত্ত ও নিরক্ষর সমাজে মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মসজিদ নির্মাণ, সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের জন্য সেলাই কেন্দ্র গঠন, ছাত্র-ছাত্রী ও বিধবাদের মাসিক বৃত্তি প্রদান, দারিদ্র পীড়িত মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করা, বঞ্চিত রোগীদের উন্নত চিকিৎসা, শীত মৌসুমে কম্বল বিতরণ, গৃহহীন বিধবাদের ঘর নির্মাণ এবং শক্তিশালী মেশিনের মাধ্যমে গভীর নলকূপ স্থাপন করে দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের সেবা দিয়ে চলছে।

ট্রাস্টের অন্যতম লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো, আধুনিক ও দ্বীনি শিক্ষার সমন্বয়। সে লক্ষ্যে ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয় ‘জামিয়া ইসলামিয়া লিল বানাত’ নামে একটি আধুনিক গার্লস হাইস্কুল— যাতে রয়েছে ধর্মীয় ও আধুনিক জ্ঞান ও বিজ্ঞানের অনুপম সমন্বয়।

মেয়ে শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠানটির কারিকুলামে আরবি উর্দু হিন্দি ইংরেজি ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি হাদিস, ফিকহসহ প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিক্ষা ও গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। পাঠ্য কারিকুলামের বাইরে কম্পিউটার শিক্ষা, স্পোকেন ইংলিশ, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, অংকন ও কারুশিল্পের পাঠও প্রদান করা হয়। সুসজ্জিত লাইব্রেরি ও মনোরম ক্যাম্পাস ও দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই গুণীজনের প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছে।

এটি ছাড়াও এই ট্রাস্ট ঝাড়খন্ডে দারুল উলুম ‘মাহাদুল কুরআনিল কারিম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে— যা ঝাড়খন্ডের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ঝাড়খন্ডের বত্রিশটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করে। এছাড়াও ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয় বিহারের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মাদানিয়া চিলমিল, বাঙ্কা। এ সকল প্রতিষ্ঠানের অধীনে শত শত মক্তব ও হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া ও শিক্ষার সুযোগ লাভ করে। আধুনিক ও দ্বীনি শিক্ষার সমন্বয়ে বিহারে পরিচালিত বেশকিছু মাদানী পাবলিক মডার্ন হাইস্কুলও ট্রাস্টের অন্যতম অবদান।

আওলাদে রাসুল, শাইখুল আরব ওয়াল আজম শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি রহ.-এর স্বপ্ন ছিল, ভারতের প্রতিটি গ্রামে যেন কমপক্ষে একটি করে মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ট্রাস্ট তার সেই মহান স্বপ্ন পূরণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই মুসলিম শিশু-কিশোরদের প্রাথমিক শিক্ষা-দীক্ষার জন্য অসংখ্য মানসম্পন্ন মক্তব প্রতিষ্ঠা করেছে।

ট্রাস্টের শিক্ষা ও সামাজিক অবদানের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। এরমধ্যে অন্যতম হলো, ঝাড়খন্ডের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। ঝাড়খন্ডের পাহাড়ি অঞ্চলের বেশকিছু অংশ তীব্র পানির সংকটে ভোগে। বছরের বিভিন্ন সময় মানুষ বিশুদ্ধ পানি পায় না। ড্রেন ও নলার পানি ব্যবহার ছাড়া মানুষের তেমন উপায় থাকে না— যা নানা প্রদাহ ও রোগের কারণ। সমাজসেবার ইসলামি অনুভূতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে ট্রাস্ট পার্বত্য অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে ২৩২৭টি স্থানে গভীর খনন ও পাহাড় খনন করা হয়েছে; যদিও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল।

২০০০ সালে ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ সকল অবদানসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঞ্জেগানা ও জুমার মসজিদ নির্মাণ, দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, গরিব ও অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা প্রদান, গরিব নারীদের বিবাহ প্রদান, মুসলিম নারীদের জন্য কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র (মাদানী মহিলা ITI) প্রতিষ্ঠা, বিধবাদের ভাতা প্রদান, নানা স্থানে কুরবানির আয়োজন, খাদ্যশস্য বিতরণ, শীত ও দুর্যোগকালীন ত্রাণ প্রদান, শারীরিকভাবে অক্ষমদের সাহায্য প্রদান, উচ্চশিক্ষায় সহায়তা প্রদান, বিধবা নারীদের জন্য গৃহ নির্মাণসহ নানাবিধ সামাজিক ও কল্যাণমুখী কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে।

ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি রহ.-এর ছোট সাহেবজাদা সাইয়েদ আসজাদ মাদানি এক বিবৃতিতে বলেন— ‘এই মুহূর্তে ভারতে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে, যেখানে ছেলেদের আধ্যাত্মিক ও আধুনিক শিক্ষা এবং ইসলাম অনুযায়ী তাদের চরিত্র গঠনের জন্য উন্নত ছাত্রাবাসের সুবিধা রয়েছে। ট্রাস্ট ইতোমধ্যেই ভারতের দেওবন্দ, ঝাড়খন্ড, বিহার এবং ওড়িশ্যায় ধর্মীয় ও আধুনিক বিজ্ঞানকে একত্র করতে সমর্থ হয়েছে। যা নিঃসন্দেহে ট্রাস্টের অনুপম সাফল্য।’

ট্রাস্টের অন্যতম ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে রয়েছে ইসলামিক ও সমসাময়িক শিক্ষার একটি বৃহৎ কলেজ প্রতিষ্ঠা— যার নাম জামিয়া উলুম-ই শারিয়া ওয়াল আসরিয়া। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেওবন্দ সংলগ্ন ৭৩ বিঘা জমিও ক্রয় করা হয়েছে। ট্রাস্টের সভাপতি সাইয়েদ আসজাদ মাদানি এর নির্মাণে শুভাকাঙ্ক্ষীদের সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করেন।