হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

পবিত্র মাহে রমযানের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা ও কারাবন্দী আলেম উলামাদের মুক্তি কামনায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে দু’আ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ (২৮ মার্চ) মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় রাজধানীর উত্তরায় জামিয়াতুল মানহাল আল ক্বওমিয়া মিলনায়তনে এই দু’আ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী।

এ সময় ঢাকা মহানগর সেক্রেটারী মুফতী কিফায়াতুল্লাহ আজহারীর সঞ্চালনায় হেফাজতের নায়েবে আমীর আল্লামা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেন, কুরআন নাযিলের মাস পবিত্র মাহে রমযানে কুরআনের শিক্ষাকে সকলের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা আলেম উলামা ও ইমামদেরদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই প্রত্যেক আলেমের উচিৎ, বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত ও যিকির ইস্তিগফার পাঠ করার জন্য মুসল্লীদেরকে উৎসাহিত করা। নিজেদের মসজিদ এলাকায় দিনের বেলায় হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার ব্যবস্থা নেওয়া। সকল প্রকার বেহায়াপনা এবং অশ্লীল প্রদর্শনী বন্ধ রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। খোদাদ্রোহী অপশক্তির বিরুদ্ধে তৌহিদী জনতার ঈমান শানিত করা। নিজেদের মুসল্লিদের সম্পদের যাকাত প্রাপ্যদের মাঝে বিতরণ করার ব্যবস্থা নেওয়া। ২০ রাকাত তারাবীহের বিরুদ্ধে যাবতীয় প্রোপাগান্ডা ও বিভ্রান্তিকর ষড়যন্ত্র থেকে মুসল্লিদের রক্ষা করা। মাহে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার জন্য মুসল্লীদেরকে উদ্বুদ্ধ করা।

হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, মাহে রমাযান আমাদের মাঝে এসেছে তাকওয়া ও খোদাভীতির আহবান নিয়ে।তাকওয়ার মূল কথা সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রন, আল্লাহর ভয়ে গুনাহ ও পাপাচার এবং গর্হিত ও অশোভন আচরণ থেকে বিরত থাকা। এটি এমন এক বিষয়, যা মানবের পার্থিব শান্তি ও লৌকিক মুক্তির জন্য অপরিহার্য। রমযান মাস মুসলমানদের জন্য নিজেদের পরকালের মুক্তি এবং দুনিয়ার জীবনকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে নেওয়ার সূবর্ণ সুযোগ।

কারাবন্দী নেতাকর্মীদের ব্যাপারে হেফাজত মহাসচিব বলেন, এপর্যন্ত যে সকল বন্দি মুক্তি পেয়েছেন এবং সে সকল বন্দীদের মুক্তির ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট যারা অবদান রেখেছেন তাদের সকলের প্রতি আমরা আন্তরিক শুকরিয়া ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখনো যে সকল ওলামায়ে কেরাম, হেফাজতের নেতা-কর্মী ও ইসলাম প্রিয় জনতা বন্দী রয়েছেন, তাদের সকলের দ্রুত মুক্তি দানের জন্য সরকারের নিকট জোরালো দাবী জানাচ্ছি। তাদের এই দীর্ঘ বন্দিত্বের কারনে তাদের পরিবার এবং কারো কারো প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে। তাই হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে ২০১৩, ২০১৬ ও ২০২১ সালের যত মামলা হয়েছে,পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সকল মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি। এছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা বন্ধ করতে এবং পঞ্চগড়ের সহিংসতার ঘটনায় নিরিহ কাউকে গ্রেফতার ও হয়রানি না করার জন্য সরকারের নিকট তিনি জোর দাবী জানান।

যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, রমজান আত্মসংযম, অনুকম্প ও ক্ষমা লাভের মাস। এ মাসে ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষার মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ হয়। তাই রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে চলুন, ইনশাআল্লাহ জীবনে বরকত আসবে। এই মাসের দিবস-রজনীকে আল্লাহতায়ালা খায়ের ও বরকত দ্বারা পূর্ণ করে রেখেছেন। এ মাসকে আল্লাহতায়ালা তাকওয়া অর্জনের অনুশীলন, ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সব আমলের জন্য ভরা বসন্ত বানিয়েছেন। এ মাস শুধু একটি মাসই নয়; বরং গোটা বছরের এটা তাপকেন্দ্র। এ মাস থেকেই মুমিন গোটা বছরের তাকওয়া ও তাহারাতের মূলমন্ত্র সঞ্চয় করে। পুরো বছরের ঈমানি প্রস্তুতি এ মাস থেকেই গ্রহণ করে। এছাড়া তিনি ঈদের আগে এই রমজানের মধ্যে সকল কারাবন্দী আলেম উলামাদের মুক্তির জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানান।

আরো উপস্থিত ছিলেন, খতমে নবুওয়ত এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, ঢাকা মহানগর সেক্রেটারী মুফতী কিফায়াতুল্লাহ আযহারী, ঢাকা মহানগর সহ সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আনিসুর রহমান, ঢাকা মহানগর সহ সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ ইয়াহয়া, ঢাকা মহানগর প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুস্তাকিম বিল্লাহ হামিদী, বাংলাদেশ আইম্মাহ্ পরিষদের মহাসচিব মাওলানা এনামুল হক মূসা, হেফাজতের কেন্দ্রিয় মিডিয়া বিষয়ক সমন্বয়ক সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার ও মহানগর কমিটির সদস্য মাওলানা যুবায়ের রশীদ প্রমূখ।