২০২৪ সালে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

পয়গাম ডেস্ক :

আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২

কক্সবাজারের মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ২০২৪ সালে। এর মধ্যে ৬০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট জানুয়ারিতে আর অপর ইউনিটটি জুলাই মাসে উৎপাদন ও বিতরণ শুরু করবে। ৫১ হাজার সাড়ে ৮শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের পোর্ট ও ভৌত অবকাঠামোর কাজ ৮৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল অবকাঠামো। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে পাওয়ার প্ল্যান্টের ভূমি উন্নয়ন কার্যক্রম। স্টিল ও ইস্পাতের গাঁথুনিতে গড়ে তোলা হচ্ছে বয়লার, পাওয়ার হাউস ও ২৭৫ মিটার উঁচু চিমনি। একই সঙ্গে আনুষঙ্গিক নির্মাণ কাজও চলছে জোরেশোরে।

মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলতে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে মূল কাজ শুরু করে জাপানের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। প্রথম ধাপে ১৬০৫ একর জমিতে উৎপাদিত হবে ১ হাজার ২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৪ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে জোরেশোরে কাজ চলছে। ওই বছরের জানুয়ারিতে প্রথম ইউনিট এবং অপর ৬শ’ মেগাওয়াটের ইউনিটটি উৎপাদন ও বিতরণ শুরু করবে জুলাই মাসে।

মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী (তড়িৎ) মো. আবু রায়হান সরকার বলেন, ১ হাজার ২’শ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি- আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। আশা করছি- আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ৬শত ইউনিট এবং একই বছরের জুলাই মাসে দ্বিতীয় ৬ শত মেগাওয়াটের ইউনিট বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনে যাবে।

আর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. মিজানুর রহমান বলেন, আগামী বছরের পুরোটা সময় আমাদের হাতে আছে, এক হাজারের মতো বিদেশিসহ এখানে কাজ করছেন মোট ১০ হাজার ৪ শত ১০ জনবল। এরই মধ্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দুইটি ইউনিটে প্রতিদিন ১০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা দরকার পড়বে। এই কেন্দ্র পরিবেশগতভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।

মূলত কয়লার জন্য পরিবেশ সম্মত উপায়ে কোল্ড ইয়ার্ড স্থাপন করা হয়েছে। বড় ভ্যাসেল থেকে কয়লা নামিয়ে এই কোল্ড ইয়ার্ডে রাখা হবে। কোল্ড ইয়ার্ডটি সার্বিকভাবে আচ্ছাদিত অবস্থায় থাকার কারণে ঝড়-বৃষ্টিতে কয়লা ছড়িয়ে পরিবেশগত ভাবে কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে না। সমুদ্র পথেই বিদেশ থেকে কয়লা আনা হবে। প্রাথমিকভাবে কয়লা আমদানির জন্য তিনটি দেশকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক, অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া। আপাতত অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়াকে কয়লা আনার জন্য বাছাই করা হয়েছে। তাছাড়া এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিবে এ প্রকল্প। আমরা প্রত্যাশা করছি, সময়মতো কাজটি শেষ হবে।

মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মাতারবাড়ি আলট্রা পাওয়ার প্রকল্পটির ইতিবাচক দিক হচ্ছে- সময়মতো কাজটি এগিয়ে যাওয়া। আমরা আশা করছি, ২০২৪ সালে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হব এবং এই প্রকল্পের কারণে একটি পোর্ট নির্মাণ হয়েছে। যেটিকে মাল্টিপল ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে গভীর সমুদ্র বন্দর বাণিজ্যিকভাবে রূপান্তর করতে যাচ্ছি। ভূ-প্রকৃতির পরিবেশে এই বন্দর নির্মিত হচ্ছে এটি বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন।