মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। এমনকি মার্চ মাসেই আর সেই পরীক্ষা নেওয়া কঠিন বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্ধারিত পরীক্ষা থাকায় এ পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্নতায় আছেন চাকরিপ্রার্থীরা। ওই পরীক্ষায় ১ লাখ ৫৫ হাজার প্রার্থী অংশ নেবেন।
পিএসসির নির্ভরযোগ্য সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, ৪৫তম বিসিএসের প্রশ্ন তৈরি শেষ। এমনকি গত সপ্তাহের শুরুতে প্রশ্নের মডারেশনও শেষ হয়েছে। এখন প্রশ্ন ছাপানোর কথা। কিন্তু পিএসসি যেসব প্রেস থেকে প্রশ্ন ছাপায়, সেখানে কোনো শিডিউল পাওয়া যায়নি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই প্রেস থেকে কোনো সবুজ সংকেত পাওয়া যায়নি। এখন এই অল্প সময়ে আর প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি মার্চের মধ্যেও এ পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ।
এদিকে ১০ মার্চ ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির তত্ত্বাবধানে ৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ‘অফিসার (জেনারেল)’ পদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৪ চাকরিপ্রার্থী। এই পরীক্ষার্থীদের অনেকে আবার ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রার্থী। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগসংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অফিসার পদে আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে যোগ্য বিবেচিত প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা (এমসিকিউ) ১০ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের এলাকাভুক্ত ৫৪টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা নেওয়া হবে। মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৪। একেকটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার পর্যন্ত।
ব্যাংকের পরীক্ষার একই সময়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ দেওয়া হয়েছিল। এ অবস্থায় মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয়ে কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি পিএসসি।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিএসসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গত সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রশ্নের মডারেশন শেষ। অর্থাৎ আমরা প্রশ্ন ছাপার জন্য পুরোপুরি তৈরি আছি। এখন আমাদের নির্ধারিত প্রেস থেকে কোনো সবুজ সংকেত পাইনি। এটি জানা গেলেই কেবল বলা যাবে পরীক্ষা মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে হবে কি না।’
ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা বিজ্ঞপ্তিতে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাব্য তারিখের কথা বলেছিলাম। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, এতে কোনো কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ১০ মার্চ ব্যাংকের পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা তাঁরা পাননি। পরীক্ষা পেছানোর বিষয়ে তাই তাঁরা জানেন না। অর্থাৎ ১০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরীক্ষা হচ্ছে বলেই জানান ওই কর্মকর্তা। ৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৭৬৩টি পদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় কতজন অংশ নেবেন, সেই তালিকাও এখনো প্রকাশ করেনি ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি।
পিএসসি বলছে, ৪৫তম বিসিএসের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এতে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। ৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে।
৪৫তম বিসিএসে ২ হাজার ৩০৯ ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১ নম্বর এবং ভুল উত্তর দিলে প্রতিটি ভুলের জন্য মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে শূন্য দশমিক ৫০ নম্বর করে কাটা যাবে।
এদিকে ৪৫তম বিসিএসের আবেদন করতে গিয়ে সমস্যা হওয়ায় ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদের কোড সংশোধন করেছে পিএসসি। এবারই প্রথমবারের মতো ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পিএসসি।
আবেদনের সময় ক্যাডার পদে যেমন পছন্দ নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায়, তেমনি নন-ক্যাডার পদেও পছন্দের তালিকা নির্দিষ্ট করে দিতে পেরেছেন প্রার্থীরা। কিন্তু আবেদন করতে গিয়ে কিছু সমস্যায় পড়েন আবেদনকারীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদের কোড সংশোধন করে পিএসসি।