শায়খ আলী আহমদ মোল্লা মুয়াজ্জিন হিসেবে ১৯৭৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ পান। তারপর থেকে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে সুমধুর সুরে আজান শুনিয়ে মুগ্ধ করে রেখেছেন মুসলিম উম্মাহকে। বর্তমানে তিনি ‘শায়খুল মুয়াজ্জিনিন’ বা প্রধান মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পবিত্র কাবাঘরে দীর্ঘকাল ধরে আজান দেওয়ায় ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বিলালের (রা.) নামের সঙ্গে মিলিয়ে তাকে উপাধি দেওয়া হয় ‘বিলাল আল-হারাম’ বা হারাম শরিফের বিলাল। তিনি বায়তুল্লাহ শরিফের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও প্রবীণ মুয়াজ্জিন।

১৯৪৫ সালে মক্কা নগরীর প্রসিদ্ধ সুক আল-লাইল এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে শায়খ আলী আহমদ মোল্লা জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শৈশবে মসজিদুল হারামে শায়খ আশুরের কাছে পড়াশোনা শুরু করেন। পরে মাসআয় অবস্থিত রহমানিয়া মাদরাসায় অধ্যয়ন করেন এবং রিয়াদের ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল এডুকেশন থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

শায়খ আলী মোল্লা ১৯৭৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদুল হারামের মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ পান। তার বংশের অনেকেই পবিত্র মসজিদুল হারামে আজান দেওয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তার দাদা আলী আবদুর রহমান মোল্লা, বাবা, চাচা আবদুর রহমান মোল্লা, চাচাতো ভাই আবদুল লতিফ, আবদুল্লাহ ও শায়খ আবদুল মালিক, নানা আবদুল্লাহ খাওজ, মামা আবদুল হাফিজ খাওজ, মামাতো ভাই তাওফিক বাইসহ বংশের আরও অনেকেই এই দায়িত্ব পালন করেছেন। তার চাচাতো ভাই শায়খ আবদুল মালিক মোল্লার মৃত্যুর পর তিনি মসজিদুল হারামের প্রধান মুয়াজ্জিন নিযুক্ত হয়েছিলেন।

শায়খ আলী মোল্লা মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে মসজিদুল হারামের বাব আল জিয়াদায় আজান দেওয়া শুরু করেন। এরপর তিনি বাব আল মাহাকামার মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি পুরো মসজিদুল হারামের প্রধান মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মসজিদুল হারামে লাউডস্পিকার ব্যবহার শুরুর আগ থেকে আজান দেওয়া শুরু করেন শায়খ আলী মোল্লা। তখন মসজিদুল হারামের সাতটি মিনার থেকে মুয়াজ্জিনরা আজান দিতেন। জমজম কূপের পাশ্ববর্তী মিনার ‘আল মাকাম আল শাফেয়ি’ থেকে প্রধান মুয়াজ্জিন আজান শুরু করেন। পরে অন্যরা তা পুনরাবৃত্তি করতেন। এভাবেই তখন আজান দেওয়া হতো।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের টিভি ও রেডিওতে আজান দেওয়ার সময় তার দেওয়া আজানই প্রচারিত হয়। ফলে অনেক সময় বায়তুল্লাহ শরিফে গিয়ে মুসলমানরা আজানের সময় সেই পরিচিত আওয়াজ শুনতে পেয়ে অভিভূত হয়ে পড়েন।