আফগানিস্তানে পাওয়া গেলো লিথিয়ামের খনি

ইমারাতে ইসলামিয়্যা আফগানিস্তানের লিথিয়াম খনি উত্তোলনে বিনিয়োগ করার আগ্রহী প্রকাশ করেছে আমেরিকা সহ ৫টি দেশ।

গত শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশটির তথ্য ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মাদ ইউনুস রশিদ।

তিনি বলেন, নূরিস্তান প্রদেশের লিথিয়াম খনি উত্তোলনে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপান, চীন, আমেরিকা, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

ইউনুস রশিদ বলেন, আফগানিস্তানের উচ্চমাত্রায় অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সকল উপাদান বিদ্যমান। অদূর ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার উচ্চ সক্ষমতা রয়েছে আমাদের।

এক্ষেত্রে অর্থনীতিবদগণ মনে করছেন, যদি দেশেই খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা করতে পারে আফগানিস্তান, তাহলে খুব দ্রুতই তারা অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে।

অপরদিকে দেশটির বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যৌথ ও এককভাবে মাইনিং সেক্টরে বিনিয়োগের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। দেশেই খনিজ সম্পদ প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম এমন কোনো কোম্পানিকেই যেনো খনি উত্তোলনের কন্ট্রাক্ট দেয়া হয় ইমারাতে ইসলামিয়্যা আফগানিস্তানকে সেই আবেদনও জানান তারা।

জানা যায়, লবণাক্ত পানি (ব্রাইন) বা শক্ত খনিজ হলো লিথিয়ামের প্রধান উৎস। অতিমাত্রায় সক্রিয়তার কারণে উত্তোলনের পর একে কেরোসিন ইত্যাদির ন্যায় খনিজ তেলের নিচে বা বাতাসহীন কোনো পাত্রে রাখতে হয়।

অতি সক্রিয় ধাতু হওয়ায় প্রকৃতিতে স্বতন্ত্র অবস্থায় কোনো লিথিয়াম পাওয়াটাও দুষ্কর। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যে লিথিয়াম পাওয়া যায় তা মূলত আরো অন্যান্য পদার্থের সাথে যৌগ অবস্থায় বিদ্যমান থাকে।

তাছাড়া খনিজ পাথর থেকে লিথিয়াম আহরণ খুবই ব্যয়বহুল। আর সাগরের নোনা পানিতে লিথিয়ামের যে উপস্থিতি রয়েছে, তা পরিশোধন করে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার যে প্রক্রিয়া প্রচলিত রয়েছে তাও বেশ কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। তাই লিথিয়াম প্রধানত (প্রায় ৮৩%) লবণাক্ত লেক বা সল্ট প্যান থেকেই আহরিত হয়।

প্রথমে লবণাক্ত পানিকে সূর্যতাপে বাষ্পীভূত করে লিথিয়াম লবণের ঘনত্ব বাড়ানো হয়। এরপর কাঙ্ক্ষিত লিথিয়াম কার্বোনেট প্রাপ্তির জন্য একে সোডার (সোডিয়াম কার্বোনেট) সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটানো হয়। বিক্রিয়ার ফলে তলদেশে যে লিথিয়াম কার্বোনেট পাওয়া যায় তা নির্দিষ্ট শিল্পকারখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, বর্তমানে নবায়নযোগ্য শক্তিকে শিল্পায়নের প্রধান উপাদান খনিজ বা জীবাশ্ম জ্বালানির প্রধান বিকল্প মনে করা হয়।

এমনকি জলবায়ুর বিস্ময়কর পরিবর্তন ও জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসতে থাকায় বিশেষজ্ঞগণ ও ইলন মাস্কের মতো ব্যক্তিরা স্পষ্ট ভাবেই বলে থাকেন যে, সৌরতাপ, সূর্যরশ্মি, পানি ও বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানিই হচ্ছে দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব।

তাছাড়া খনিজ লিথিয়াম থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক শক্তির নবায়ন যদিও এখনো সহজলভ্য করে তোলা যায়নি এরপরও তা নবায়নযোগ্য হওয়ায় দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের অপরিহার্য অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।

মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ডিজিটাল ও ইলেকট্রিক ডিভাইসের রিচার্জেবল ব্যাটারী, হার্ট পেসমেকার, খেলনা, ঘড়ি ইত্যাদিতে ব্যবহৃত নন-রিচার্জেবল ব্যাটারীতে অতিমাত্রায় লিথিয়ামের ব্যবহার এবং বিমান ইত্যাদির ইঞ্জিন, সাইকেলের ফ্রেম, দ্রুতগতির ট্রেন, অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্র, এয়ার কন্ডিশনিং ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ড্রাইং সিস্টেম, হাইড্রোজেন ফুয়েল সংরক্ষণ, মাইন্ড স্ট্যাবিলাইজ বা ডিপ্রেশন ঠিক করার ওষুধ তৈরিতে লিথিয়াম সমৃদ্ধ বিভিন্ন উপাদানের অপরিহার্যতাও প্রমাণ করে যে নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক শক্তির এই উৎসটিই হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তাছাড়া আধুনিক পৃথিবীতে গতিশীলতা আনয়নে লিথিয়ামের বহুমাত্রিক ব্যবহার ও অপার সম্ভাবনা থাকায় ‘নতুন শতাব্দীর সোনা’ নামেও আখ্যায়িত হচ্ছে ব্যয়বহুল এই খনিজ উপাদানটি।

কারণ স্বরূপ বলা হচ্ছে, স্বল্প শক্তিতে উচ্চমাত্রার ফলাফল ও বহুমাত্রিক ব্যবহার থাকায় কালো সোনা খ্যাত মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেলের ন্যায় লিথিয়ামও অতিদ্রুত শিল্পবিপ্লব ও বৈশ্বিক আধুনিকায়নে সক্ষম। বরং এর কার্যকারিতা খনিজ তেল থেকেও বেশী হওয়ায় শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নে এর গতিশীলতা খনিজ তেল থেকেও বেশি।

এবিষয়ে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ওহাইওমিংয়ে পিএইচডিরত বাংলাদেশী রসায়ন বিশেষজ্ঞ ইবরাহিম মুদ্দাসসেরের বক্তব্য হলো, শতবর্ষ আগে মধ্যপ্রাচ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির বিশাল আধার আবিষ্কার ভূরাজনীতি বা বিশ্বব্যবস্থায় যে বড় পরিবর্তন এনেছিল, লিথিয়াম সম্ভবত তেমন কিছুই করতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যে দুশ্চিন্তাত রয়েছে তাতেও হয়তো কিছু আশার বাণী শোনাবে খনিজ এই উপাদানটি। তাই লিথিয়ামকে এ শতাব্দীর স্বর্ণ বললে মোটেও বাড়াবাড়ি হবে না। আসলে লিথিয়াম সোনার চেয়েও দামি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *