
বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে রাশিয়ায় পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। তার পতনের পর সরকারের বিরোধীদের আটক রাখার কুখ্যাত সায়দনায়াসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের বন্দীদশা কাটিয়ে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস ফেললেও অনেকেই নিজেদের নাম পর্যন্ত ভুলে গেছেন বলে জানা গেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটসের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, রাজধানী দামেস্কের কুখ্যাত সায়দনায়া কারাগারে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬১৪ জনেরও বেশি বন্দী ছিল। আসাদের পতনের পর বিদ্রোহীরা এই কারাগারের তালা খুলে দিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আসছিল। যদিও আসাদ প্রশাসন সবসময়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর মতে, সিরিয়ার কারাগারগুলো আসাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই কারাগারগুলোতে ব্যাপক নির্যাতন, মারধর, অনাহারের মতো ঘটনা ঘটেছে যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
অ্যাসোসিয়েশন অব ডিটেইনিজ অ্যান্ড মিসিং সেডনায়া প্রিজন (এডিএমএসপি) ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে সায়দনায়া কারাগারকে ‘মৃত্যুশিবির’ বলে অভিহিত করে। ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সেখানে ৩০ হাজারের বেশি বন্দীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে সংস্থাটি। পরবর্তীতে আরও ৫০০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ কারণে সায়দনায়াকে ‘মানব কসাইখানা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
মুক্তি পাওয়া বন্দীদের অনেকেই এখনও আতঙ্কগ্রস্ত। অনেকে নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না। কারও কারও স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে। তারা নিজেদের নাম-পরিচয় ভুলে গেছেন। ফলে স্বজনদের কাছে ফিরতে পারছেন না।
মাহের নামের একজন মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দী জানান, ২০১৭ সালে তাকে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। সাত বছর বিনা বিচারে কারাভোগ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি মুহূর্তে আমরা ছিলাম মৃত্যুর কাছাকাছি। নির্যাতন এতটাই বর্বর ছিল যে কোনো পশুও তা সহ্য করতে পারবে না।’