গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মুখপাত্র আবু উবায়দা জানিয়েছেন, রাফাহ এবং গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা লড়াই চালিয়ে যাবে। ইসরায়েলের আগ্রাসন যতই দীর্ঘ হোক না কেন তার ফলাফল শূন্য। খবর আল জাজিরা
তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থে আমরা পুরোপুরি লড়াই বন্ধে রাজি আছি। তবে আমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদে লড়াই চালিয়ে যেতেও প্রস্তুত রয়েছি। তাদের কোনো অর্জন নেই। যুদ্ধেক্ষেত্রে তারা তাদের সৈন্যই হারাচ্ছে। হামাসের ব্যাপক শক্তি রয়েছে এ কথা বলছি না, তবে আমরা আমাদের জনগণের অধিকার আদায়ে লড়াই চালিয়ে যাব।
আবু উবায়দা বলেন, হামাস ইসরায়েলি শতাধিক যুদ্ধজানকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, ট্যাঙ্ক, সেনাবাহিনী বহনকারী যান এবং বুলডোজার। এছাড়া হামাস টানেলে হামলাসহ রকেট ও মটার শেলের মাধ্যমে অনেক ইসরায়েলি সেনার প্রাণ নিয়েছে।
ভিডিওবার্তায় আল-কাসেম ব্রিগেডের এই মুখপাত্র দাবি করেন, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে ব্যাপক বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করছে। ইতোমধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি সাধনেও সফল হয়েছে তারা; কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য প্রকাশ করছে না।
প্রায় দু’সপ্তাহ আগে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর রাফায় অভিযান শুরু করেছে আইডিএফ। সেখানেও ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের তীব্র সংঘাত চলছে বলে দাবি করেছেন আবু উবাইদা।
ভিডিওবার্তায় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত ১০ দিনে পুরো গাজা উপত্যকায় অন্তত ১০০ ইসরায়েলি সামরিক সাঁজোয়া যানকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে আল-কাসেম ব্রিগেডের যোদ্ধারা। রাফা শহরে আমাদের যোদ্ধাদের সঙ্গে আগ্রাসনকারী বাহিনীর তীব্র লড়াই হচ্ছে এবং শহরের পূর্বাঞ্চলে শত্রুরা পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে। ’
গত ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস ও তার মিত্রগোষ্ঠী প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের প্রায় ১ হাজার যোদ্ধা। ওই দিন সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে তারা, সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ২৪২ জনকে ধরে নিয়ে যায়।
জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ), যা এখনও চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আইডিএফের গত ৭ মাসের অভিযানে ইতোমধ্যে এ অভিযানে নিহত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৩০০ জন বেশি ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ৭৯ হাজার ২০০ জন। এই হতাহতদের ৫৬ শতাংশই নারী এবং শিশু।
অন্যদিকে অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় মোট ২৭৯ জন সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
তবে সম্প্রতি ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ দাবি করেছে, হামাস যোদ্ধাদের পাল্টা হামলায় গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১১৯ জন সামরিক ও বেসামরিক ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা অভিযানে গত ৭ মাসে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। এই ভয়াবহ অবস্থার জন্য গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সেখানে ক্ষমতাসীন হামাসকে সম্প্রতি দায়ী করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
সূত্র : মিডলইস্ট মনিটর, আনাদোলু এজেন্সি