গাজায় রুটির জন্য হাহাকার

গাজা উপত্যকা, একদিনের পর একদিন বেঁচে থাকার তীব্র সংগ্রামের সাক্ষী হচ্ছে। প্রায় ১৪ মাস ধরে চলা যুদ্ধের কারণে খাদ্য সংকট চরমে। ফিলিস্তিনিরা এখন প্রতিদিন ময়দা ও রুটির খোঁজে দীর্ঘ পথ হাঁটছে।

ইসরায়েলি হামলায় গাজা প্রায় পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যে কয়েকটি বেকারি যন্ত্র চালু আছে, সেখানে ভোর থেকেই দেখা যায় বিশাল লাইন। এক টুকরো রুটির আশায় পুরুষ, নারী, শিশু – সবাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে। পানি, তাজা খাবার, ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও দুষ্প্রাপ্য। এই হলো এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার দৈনন্দিন চিত্র।

যোগানের অভাবে বেকারিতেও খাদ্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। তবুও মানুষ বাধ্য হয়ে সেখানেই ভিড় করছে। যারা একদিন গাজার সম্ভ্রান্ত শ্রেণির মানুষ ছিলেন, এই সংঘাত তাদেরকেও দরিদ্রদের কাতারে নামিয়ে এনেছে। ছোট থেকে বড়, সবাই রুটির জন্য অপেক্ষা করছে।

বাড়ির কাজের ব্যস্ততা না থাকায় নারীরাও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারণ, তাদের অনেকেরই এখন বাড়ি বলতে কিছু নেই। ফলে আবালবৃদ্ধবণিতার দীর্ঘ লাইন গাজার প্রতিটি বেকারি বা খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের সামনেই এক সাধারণ দৃশ্য।

৫০ কেজি ময়দার বস্তা যা আগে ১০০ শেকেলে পাওয়া যেত, এখন তার দাম ৫০০ থেকে ৭০০ শেকেল। কিন্তু অর্থ দিলেই যে ময়দার বস্তা পাওয়া যাবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। ইসরায়েলি হামলায় গাজার বেকারি ও ময়দার গুদামগুলো অচল হয়ে পড়েছে। খাদ্য উৎপাদন প্রায় বন্ধ।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) গাজাবাসীকে সহায়তা দিয়ে আসছিল। কিন্তু ইসরায়েলি বাধার কারণে ইউএনআরডব্লিউএ তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকার বাসিন্দা লায়লা হামাদ বলেন, ইউএনআরডব্লিউএর সহায়তা বন্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য মৃত্যুর আদেশের সমান।

গাজার যুদ্ধ এক মানবিক সংকট তৈরি করেছে। প্রতিদিনের রুটির সংগ্রাম শুধু ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই নয়; এটি বেঁচে থাকার লড়াই। প্রতিটি রুটি গাজার মানুষের জীবনের শেষ আশার প্রতীক। মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের এক নারী বলেন, রুটি পেতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়, তবু রুটি পাওয়া যাবে কিনা তাও নিশ্চিত নয়।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষের ক্ষুধার হুমকি সম্পর্কে সতর্ক করে আসছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।

খাদ্য সহায়তা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় গাজাবাসীর হতাশা চরমে পৌঁছেছে।

সূত্র: আল আরাবিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *