যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ চুক্তি সাক্ষর

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন এক যুগান্তকারী চুক্তিতে সাক্ষর করেছে, যার ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে ওয়াশিংটন দুর্লভ খনিজ সম্পদের প্রবেশাধিকার পাবে এবং দেশটির পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় অর্থায়ন করবে।

আলজাজিরা জানায়, চলমান কয়েক মাসের আলোচনা শেষে বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। যদিও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন অনিশ্চিত ছিল, বিশেষ করে ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধের প্রেক্ষিতে দুই দেশের সম্পর্কে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট চুক্তির ঘোষণা দিয়ে বলেন, এই যৌথ পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল রাশিয়ার প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা—ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও স্থায়ী শান্তিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। বেসেন্ট আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই অংশীদারিত্ব কল্পনা করেছিলেন আমেরিকান ও ইউক্রেনীয় জনগণের স্বার্থে, শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে।

তবে মার্কিন প্রশাসন এখন পর্যন্ত চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। ইউক্রেনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ও প্রত্যক্ষ সহায়তার মাধ্যমে তহবিলে অবদান রাখবে। চুক্তি অনুযায়ী, খনিজ সম্পদ শোষণ থেকে প্রাপ্ত আয়ের ৫০ শতাংশ কিয়েভে স্থানান্তর করা হবে।

তহবিলের প্রথম দশ বছরের আয় সম্পূর্ণভাবে ইউক্রেনে বিনিয়োগ করা হবে। এরপর লাভ অংশীদারদের মধ্যে বণ্টন করা যাবে। চুক্তির অধীনে তহবিলের ওপর সিদ্ধান্ত গ্রহণে উভয় দেশের সমান ক্ষমতা থাকবে। এটি কেবল ভবিষ্যতের মার্কিন সামরিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত করে, অতীতের নয়।

ইউক্রেনের অর্থনীতিমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিডেনকো বলেন, আমরা কেবল একটি বিনিয়োগই অর্জন করিনি, বরং এমন একটি কৌশলগত অংশীদার পেয়েছি, যারা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনে সঙ্গী হবে।

চুক্তি স্বাক্ষরের ঠিক আগে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্মাইগাল টেলিগ্রামে বলেন, এই চুক্তি কিয়েভের খনিজ, অবকাঠামো ও ভূগর্ভস্থ সম্পদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে এবং এটি ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের পথে বাধা হবে না।

যদিও নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিষয়ে চুক্তিতে কোনো সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই, ইউক্রেন বারবার নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, ইউক্রেনে মার্কিন ব্যবসায়িক স্বার্থ বৃদ্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসনের ঝুঁকি হ্রাস পাবে।

বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ খনিজের প্রায় ৫ শতাংশ ইউক্রেনে রয়েছে বলে দেশটির দাবি। এসব খনিজ বৈদ্যুতিক যান, সামরিক সরঞ্জাম ও ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। চুক্তিটি কার্যকর হতে ইউক্রেনীয় সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *