
পৃথিবীতে অনেক বড় দাঁতের প্রাণী আছে। কিন্তু হাতির শুঁড়ের দুপাশের দাঁতের মতো এত বড় আর এত ভারী দাঁত প্রাণীজগতে আর একটিও নেই। কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন হাতির দাঁত এত বড় হয় কেন? কিংবা এত বড় দাঁত হাতির কী কাজে লাগে?
হাতির শাবকেরা এই দাঁত নিয়েই জন্মায়। কিন্তু জন্মের পরপর এই দাঁত এত বড় থাকে না।
এমনকী বাইরে থেকেও দেখা যায় না। বাচ্চা হাতির বয়স যত বাড়ে দাঁতও একই সঙ্গে বাড়তে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ দই ধরনের হাতিরই দাঁত দেখা যায়। কিন্তু পুরুষ হাতির দাঁত তুলনামূলক অনেক বড় ও সুন্দর হয়।
সব স্ত্রী হাতিদের আবার বড় দাঁত দুটি দেখাই যায় না। এর পেছনে হয়তো বিবর্তনগত কোনো কারণ আছে।
হাতির একেকটা দাঁত ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ওজন হতে পারে ২৫-৩০ কেজি পর্যন্ত।
তবে ভারতীয় হাতির তুলনায় আফ্রিকান হাতি শরীরিক আকারে যেমন বড়, এদের দাঁতও ভারতীয় হাতির চেয়ে বড় হয়। আসলে হাতির প্রয়োজনেই এদের দাঁত এত বড় হয়। দাতের আকারের সঙ্গে এর টিকে থাকা, খাদ্য সংগ্রহ ও প্রজননের ভূমিকা আছে।
হাতির নাকটা কত বড়, যেটাকে আমরা শুঁড় বলি! এই শুঁড়ই একসঙ্গে কতগুলো কাজ করে। নাকের কাজ তো করেই, সঙ্গে পানি খাওয়া, খাদ্য সংগ্রহ, কোনো কিছুকে পেঁচিয়ে ধরতে সাহয্য করে শুঁড়।
এসব কাজের সময় শুঁড়ের পাশে বড় দুটি দাঁত হাতিকে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। শুঁড়কে বাড়তি শক্তি জোগায় দাঁত। বিশাল দুটি দাঁত হাতিকে গাছের ডাল এবং পাতা টেনে আনতে সাহায্য করে। দাঁতের সাহায্যে হাতি মাটি খুঁড়তে পারে। মাটি খুঁড়ে গাছের শিকড়, মূল, কন্দ সংগ্রহ করে খায়। অর্থাৎ হাতির পুষ্টির জোগানে দাঁত একটা বড় সহায়ক হিসাবে কাজ করে।
বিপদেও এই দাঁত একই সঙ্গে ঢাল আর তলোয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। হাতি যেমন শুঁড় দিয়ে শত্রুকে পেঁচিয়ে ধরে শত্রুকে কুপোকাৎ করতে পারে, তেমনি বিশাল দাঁত বিঁধিয়ে শত্রুকে ঘায়েল করতে পারে। শত্রুর আক্রমণ ঠেকাতেও দাঁত কাজে লাগায় হাতি।
স্ত্রী হাতিদের আকৃষ্ট করতে হাতির দাঁত ভূমিকা রাখে। বড় ও শক্তিশালী দাঁত স্ত্রী হাতিদের আকর্ষণ করে। যে পুরুষ হাতির দাঁত যত বড়, সুন্দর ও মজবুত— স্ত্রী হাতি সেই পুরষের সঙ্গে মিলিত হতে আগ্রহী হয়। ফলে বড় ও শক্তিশালী দাঁত হাতির প্রজননেও ভূমিকা রাখে।
হাতিদের সামাজিক শৃংখলা, পারস্পারিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক উন্নয়নে দাঁত ভূমিকা রাখে। হাতিরা দাঁত ব্যবহার করে পরস্পরের খেলা করে। এতে পারস্পারিক সম্পর্ক মজবুত হয়।
একে অপরকে সাহায্য করতেও দাঁত ভূমিকা রাখে। যেমন, কোনো হাতি হয়তো একটা গাছ উপড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটা একা পারছে না। তখন অন্য হাতি গিয়ে তার দাঁত ব্যবহার করে সাহায্য করে। আবার কোনো দুর্বল বা বাচ্চা হাতি হয়তো কাদা বা ঝোপঝাড়ে আটকে গিয়েছে, অন্য হাতিরা দাঁত ও শুঁড় ব্যবহার করে তাকে উদ্ধার করে। ফলে সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী এবং গোষ্ঠীর ভিতরে সহযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়।
হাতির দাঁত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দাঁতের সাহায্যে হাতি পুরোনো ঝোপঝাড় ও গাছপালা উপড়ে ফেলে। ফলে, সেখানে নতুন নতুন উদ্ভিদ জন্মানোর সুযোগ পায়।
মোদ্দাকথা হলো, হাতির দাঁত যেমন হাতির জন্য ফেলনা নয়, তেমনি পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের জন্যও প্রয়োজনীয়।
সূত্র: বিবিসি নেচার